৫ জুলাই পাথারকান্দির ১৯৫ তম ঐতিহাসিক সপ্ত রথযাত্রা, ব্যাপক প্রস্তুতি

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি। 
বরাক তরঙ্গ, ২৪ জুন : আবারও বাজবে রথের ঘণ্টা, জেগে উঠবে পাথারকান্দি আসছে ১৯৫তম ঐতিহাসিক সপ্তরথ! মলিন ঐতিহ্য পাথারকান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের  খালোপারের সপ্তরথযাত্রা। ধর্মীয় ভক্তি, সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং শতাব্দীপ্রাচীন আচার-অনুষ্ঠানের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই রথযাত্রা শুধু একটি উৎসব নয় এ যেন হাজারো হৃদয়ের মিলনমেলা, গ্রামীণ জীবনের গভীর অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।পাঁচ জুলাই, খালোপারের পবিত্র ভূমি আবারও সাক্ষী থাকবে এক ঐতিহাসিক ঘটনার ১৯৫তম সপ্তরথের।

সাতটি গ্রাম থেকে রথ এসে মিলিত হবে মন্ত্রীগ্রামের রথমিলন ময়দানে, আর সেই মিলনে তৈরি হবে অপার আনন্দ, উৎসব ও ভক্তির এক অনন্য আবহ।বছর ঘুরে আবারও সেই সময় এসেছে, যখন সারা এলাকা মুখর হয়ে ওঠে শঙ্খ, কাঁসর, ঢাকের ধ্বনিতে; পাড়ায় পাড়ায় বাজে ভক্তিগীতি, আর মানুষের হৃদয়ে জেগে ওঠে আশীর্বাদ আর আশার আলো। এই রথ শুধু দেবতার নয় এ এখানকার বাসিন্দাদের শিকড়ের, আত্মার,ও সংস্কৃতির রথ।পাথারকান্দির খালেরপার অঞ্চলে আবারও আগত এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে জনগণ। এবছর আয়োজিত হতে যাচ্ছে ১৯৫ তম খালোপার ঐতিহাসিক সপ্ত রথযাত্রা, যা প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মীয় উৎসাহ ও সামাজিক সংহতির এক অনুপম নিদর্শন। আগামী পাঁচ জুলাই, পাথারকান্দির মন্ত্রীগ্রামে খালোপার রথমিলন ময়দানে এই মহোৎসব আয়োজিত হবে খালোপার উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে।এই রথযাত্রাকে ঘিরে ইতোমধ্যেই এলাকার সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রামবাংলার চেনা ছন্দে বাজছে ঢাক-ঢোল, প্রতিটি গলিতে আলো ও রঙিন পতাকায় মোড়া যেন এক আনন্দময় স্বপ্নলোক। খালোপারের দক্ষিণ বিলবাড়ী, উত্তর বিলবাড়ী, পাত্রগ্রাম, পেকুরগ্রাম, মন্ত্রীগ্রাম, ছাত্রাগ্রাম ও নয়াডহর—এই সাতটি গ্রামের রথ একত্রিত হয়ে চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী মন্ত্রীগ্রামে মিলিত হবে। এ উপলক্ষে সম্প্রতি পাত্রগ্রামের শ্রীমণ্ডপে আয়োজিত এক সভায় বিস্তারিত প্রস্তুতির কথা জানান আয়োজকরা। রথযাত্রার দিন রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্ত প্রদীপকুমার দ্বিবেদি সহ অনেক বিশিষ্ট অতিথির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

৫ জুলাই পাথারকান্দির ১৯৫ তম ঐতিহাসিক সপ্ত রথযাত্রা, ব্যাপক প্রস্তুতি
৫ জুলাই পাথারকান্দির ১৯৫ তম ঐতিহাসিক সপ্ত রথযাত্রা, ব্যাপক প্রস্তুতি

এ ছাড়াও থাকবেন স্থানীয় বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, যাঁদের উপস্থিতি রথযাত্রাকে এক বিশেষ মাত্রা দেবে। এই রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি খালোপারের মানুষদের আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ, স্থানীয় ও বাইরের এলাকা থেকে, এই রথযাত্রায় অংশ নিতে ছুটে আসেন। আয়োজকদের মতে, এবছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভক্তের সমাগম হতে পারে, যা এই উৎসবকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলবে। রথযাত্রা উপলক্ষে বসবে বড়সড় মেলা। হাঁটু পর্যন্ত কাদা জল হলেও, সেই জল যেন হয়ে ওঠে পরম পবিত্র। বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসবেন মেলার চত্বরে। লোকসংস্কৃতি, গ্রামীণ পণ্যের সম্ভার, খাবার দাবার—সব মিলিয়ে এই মেলা হয়ে ওঠে জনজীবনের এক প্রাণময় উৎসব।আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রথযাত্রার দিন মোতায়েন থাকবে পুলিশ বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে স্থানীয় প্রশাসন।খালোপার সপ্ত রথযাত্রা উন্নয়ন কমিটি সকল ভক্ত, দর্শনার্থী এবং শুভানুধ্যায়ীদের এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মহোৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই রথযাত্রা যেন শুধু এক দিনের উৎসব না হয়ে ওঠে বরং হয়ে ওঠে মিলনের, ঐক্যের ও ঐতিহ্যের এক দীপ্ত প্রতিচ্ছবি।

Author

Spread the News