প্রচারে নেই, হিমন্তের সভায়ও গরহাজির, গেরুয়া শিবিরেও কি ব্রাত্য গৌতম!

এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ এপ্রিল : আগামী ২৬ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপি দলের হয়ে প্রচারে নেই প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়। তাহলে কি গেরুয়া শিবিরে ব্রাত্য গৌতম? এ প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। একসময় দিল্লি-দিসপুরের ক্ষমতার অলিন্দে যার সবকিছুই নখদর্পণে ছিল, সেই গৌতম রায় আজ গেরুয়া শিবিরে দলের হয়ে প্রচারে নেই । কাটলিছড়ার দু’বারের বিধায়ক ও তিনবারের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় একসময়ের কংগ্রেসের কিং মেকার ছিলেন। করিমগঞ্জ লোকসভা আসনে নেপাল দাস ও ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য সাংসদ হওয়ার নৈপথ্য নায়ক ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম। ১৯৮৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গৌতম রায়ের ত্রিশ বছরের রাজনৈতিক জীবন ছিল চমকে দেওয়ার মতো। সন্তোষমোহন দেবের পর বরাকের রাজনীতিতে তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি যখন যা বলতেন তাই করে দেখাতেন। শিলচরের সাংসদ প্রয়াত সন্তোষমোহন দেব ও প্রয়াত মন্ত্রী দীনেশ প্রসাদ গোয়ালা ও প্রয়াত শহিদুল আলম চৌধুরীর সমগোত্রীয় রাজনীতিবিদ মন্ত্রী গৌতম রায়। রাজনীতির আঙ্গিনায় ‘সন্তোষ-দীনেশ-শহিদুল’ এই ত্রয়ী বিদায় নিলেও বরাকের রাজনীতিতে ছায়ার মতো অবস্থান করছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম। অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের আমলেই কংগ্রেস দল ত্যাগ করে বিজেপিতেই যোগ দেন গৌতম। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হাত ধরেই গেরুয়া বসন পরেন এককালের দাপুটে কংগ্রেস নেতা গৌতম রায়। ২০২১ সনে বিধানসভা নির্বাচনে কাটিগড়া কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। বিজেপির নির্বাচনী জন সভাগুলোতে আজ গৌতম রায়ের অভাব ও অনুপস্থিতি বোধ করছেন কাটলিছড়ার জনগণ।

এককালের দাপুটে মন্ত্রী গৌতম রায় প্রচারে না থাকায় বিভিন্ন মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে____

লোকসভা নির্বাচনে বরাকে ভোট প্রচারে খামতি নেই সব দলের প্রার্থীদের। নির্বাচনী প্রচারে ঝড়ো হাওয়া বইছে সর্বত্রই। সামাজিক মাধ্যমে ও প্রার্থী-সমর্থকদের প্রচার তুঙ্গে উঠেছে। বৃহস্পতিবার, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিজয় সংকল্প সমাবেশ ছিল কাটলিছড়ায়। কাটলিছড়া চালমার্স স্কুলের মাঠে করিমগঞ্জ আসনের বিজেপি প্রার্থী কৃপানাথ মালার হয়ে প্রচারে হাওয়া তুলতে বিশাল জনসভা করলেও কার্যত অনুপস্থিত থাকেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা গৌতম রায়। বরাকের অসংখ্য অনুগতদের হতাশ করে এবার লোকসভা ভোটের ময়দানে নেই এককালের দাপুটে মন্ত্রী গৌতম। তাহলেই কী রাজনীতিতে সন্যাস নিচ্ছেন তিনি। হাইলাকান্দি রবীন্দ্রমেলা কমিটির সভাপতি গৌতম রায় মাসখানেক আগেও তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বক্তব্য রেখে মেলা পরিচালন কমিটির বিদায়ী সভাকে কার্যত মাতিয়ে তোলেন। হাইলাকান্দিতে এটি ছিল মন্ত্রী গৌতম রায়ের ভোটের আগে শেষ সভা। এরপর থেকেই নিজেকে একপ্রকার প্রচারের আড়ালে চলে যান। লোকসভা নির্বাচনে করিমগঞ্জ আসনে প্রার্থী হবেন কিনা। একসময় এনিয়ে সাংগঠনিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়। বিজেপি নেতা গৌতম রায় তখন জানিয়েছিলেন, বিজেপি দল এমনকি মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তিনি প্রার্থী হতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার আগেই তিনি তাঁর কলকাতার বাড়িতে চলে যান।

পায়ে চোঁট, কলকাতার বাড়িতে বিশ্রামে প্রাক্তন মন্ত্রী রায়____

কাটলিছড়া বাজার কালীবাড়ি কীর্তন পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌতম রায়। ৬৪ প্রহর হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতি গৌতম রায়কে আমন্ত্রণ জানাতে কলকাতার বাড়িতে ছুটে যান কাটলিছড়ার ইন্দ্রজিৎ দেব সহ কীর্তন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অন্য পদাধিকারীরা। ইন্দ্রজিৎ দেবের সঙ্গে আলোচনায় করিমগঞ্জ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দলের প্রচারে গৌতম রায় ব্রাত্য কেন জানতে চাইলে দেব বলেন, গৌতম রায়ের পায়ে চোঁট রয়েছে। তিনি এসময় কলকাতার বাড়িতে বিশ্রামে আছেন। করিমগঞ্জ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেই এককালের দাপুটে মন্ত্রী বিজেপি নেতা গৌতম রায়। এ নিয়ে বিজেপির অন্দরমহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।

Author

Spread the News