পাথারকান্দিতে ‘নাট্য মিলন’ এ দর্শকের মন কাড়ল হাওড়ার থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরি

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৩ মার্চ : পাথারকান্দি কলেজ অব এডুকেশনের বার্ষিক সোস্যাল মিটের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত খেলাধূলার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের পরে, নাট্যপ্রেমীদের জন্য বিশেষ একটি সন্ধ্যা সাজানো হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পাথারকান্দি নাট্যজনের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘নাট্য মিলন ২০২৫’-এ, দর্শকের মন জয় করতে আসেন হাওড়ার থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরি’র আমন্ত্রিত নাট্যদল। নাটকের নাম ‘UC-10’, যা নাট্যকার দীপক নায়েকের কল্পনাশক্তির ধারায় রচিত। সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়, অসিতাভ ঘোষ ও সৌরভ চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করে প্রাণ ফেলেন নাটকে, যেখানে আবহ হিসেবে প্রদীপ ঘোষও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

স্বাগত জানান কলেজের অধ্যক্ষ আইনুল হক। প্রভাষক অজয় দাস উত্তরীয় বরন করেন এবং নাট্যজনের সম্পাদক রাজেশ দে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। নাট্য মিলনে এছাড়াও সৌমেন দাস, আয়ুষ দাস, বিপ্রজীৎ দাস, অমিত পাল, দেবস্মিতা দেবরায়, রিমা দেব, নবজিৎ রায়, নিরূপম দাস, শুভ্রজিৎ রায়সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

পাথারকান্দিতে ‘নাট্য মিলন' এ দর্শকের মন কাড়ল হাওড়ার থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরি

‘UC-10’-এর কাহিনী অতি প্রাঞ্জল ও হৃদয়বিদারক। নাটকে এক প্রান্তিক মানুষ, যার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সে সেই স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলে যান। কিন্তু এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা তার জীবন বন্ধ করে দেয় এবং তার শেষ ঠিকানা হয়ে ওঠে মর্গের ঠান্ডা ঘর।নাটকের চিত্রায়নে দেখা যায়—প্রতিবার স্বপ্ন ধরার চেষ্টায় সে ব্যর্থ হয়, তার আকাঙ্ক্ষা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনোই তার সাথে থাকেনি। এমনকি মৃত্যুর পরও, তার অব্যক্ত ইচ্ছাগুলো তাকে ভিন্নভাবে ছুঁড়ে দেয়, তাকে নামহীন ও পরিচয়হীন করে ফেলে।চরম বেদনাদায়ক এই কাহিনীর শেষে, তার দেহ জায়গা পায় একটি মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের বিচ্ছেদ টেবিলে। অন্তত মৃত্যুর পরেও সে শান্তি খুঁজে পান—কারণ তার অস্তিত্ব কিছু মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে, ভবিষ্যতের চিকিৎসা শিক্ষার্থীরা তার দেহের মাধ্যমে মানবসেবার মূল্য শিখতে পারবে।

পাথারকান্দিতে ‘নাট্য মিলন' এ দর্শকের মন কাড়ল হাওড়ার থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরি

এই নাট্য মিলনের মাধ্যমে একদিকে যেমন নাট্যশিল্পের গুণগত প্রকাশ ঘটেছে, তেমনি সমাজের এক প্রান্তিক মানুষের দুঃখজনক বাস্তবতাও তুলে ধরা হয়েছে। নাটকের বিষয়বস্তু দর্শকদের মধ্যে এক গভীর সামাজিক সচেতনতা ও সহানুভূতি উদ্রেক করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণ ও নাট্যজনের উদ্দীপনামূলক আয়োজন নাট্যপ্রেমীদের মনে এক বিশেষ ছাপ ফেলেছে। এই ধরনের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ সমাজে শিল্পের গুরুত্ব ও তার সামাজিক প্রভাবকে পুনরায় চিহ্নিত করে।

পাথারকান্দিতে ‘নাট্য মিলন' এ দর্শকের মন কাড়ল হাওড়ার থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরি

নাট্য মিলন ২০২৫ শুধুমাত্র এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি শিল্প, সমাজ ও মানবিক অনুভূতির এক অমলিন সমন্বয়। এই বিশেষ সন্ধ্যায়, নাটকের মঞ্চে ফুটে উঠেছে মানব জীবনের সংগ্রাম, ব্যর্থতা ও শেষ পর্যায়ের শান্তির এক অনন্য কাহিনী—যা দর্শকের মনে এক দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে।

Author

Spread the News