প্রয়াণ দিবসে শহিদ বিপ্লবী অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্য স্মরণ শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ৩ জুলাই : স্বাধীনতার অমর শহিদ অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রয়াণ দিবসে শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক স্মরণ সভা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গান্ধীবাগস্থিত শহিদ অসিত ভট্টাচার্যের আবক্ষ মূর্তিতে প্রথমে মাল্যদান ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। তারপর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষাগৃহে প্রবীণ সমাজকর্মী হরিদাস দত্তের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন নেতাজি গবেষক নীহাররঞ্জন পাল। প্রেক্ষাগৃহে শহিদ অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার দেব। অতীতে গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত শিলচরের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচেষ্টায় গান্ধীবাগে শহিদ অসিতরঞ্জন ভট্টাচার্যের মূর্তি নির্মাণের ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি।
এরপর দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসিত ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের মহান অবদান নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রবীরকুমার রায়চৌধুরী, মলয় ভট্টাচার্য, পিযুষ কান্তি চক্রবর্তী, অতনু চৌধুরী, বিমলেন্দু দত্ত প্রমুখ। মলয় ভট্টাচার্য বলেন, সিলেট জেলে অসিত ভট্টাচার্যের সঙ্গে সহবন্দি ছিলেন তাঁর বাবা প্রয়াত বিপ্লবী মনমোহন ভট্টাচার্য। অসিত ভট্টাচার্যের জীবনের বিভিন্ন দিক বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সকল বক্তাই।
প্রধান অতিথির ভাষণে নীহাররঞ্জন পাল বলেন, অসিত ভট্টাচার্যের পৈত্রিক নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার লেসিয়ারা গ্রামে হলেও তাঁর জন্মস্থান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বেজুড়া গ্রাম। বেজুড়াতে ছিল বিপ্লবীর মাতুলালয়। এই গ্রামের কাছেই ছিল ইটাখোলা রেলস্টেশন।বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির নির্দেশে অসিত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ছয়জনের বিপ্লবী দল ১৯৩৩ সালের ১৩ মার্চ শিলচর থেকে চাঁদপুরগামী সুরমা মেলের সরকারি ডাকলুঠ করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা ইটাখোলা ডাকলুঠ নামে খ্যাত। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অসিত ভট্টাচার্যের প্রাণদণ্ড ও তাঁর সঙ্গী অপর তিন বিপ্লবীর আজীবন দীপান্তর দণ্ডের সাজা হয় বলে জানান নীহারবাবু। অসিত ভট্টাচার্যের বাবা ক্ষীরোদমোহন ভট্টাচার্য ছিলেন করিমগঞ্জ এওলাবাড়ি চা বাগানের সামান্য বেতনের কম্পাউন্ডার। পারিবারিক দারিদ্রতা সত্ত্বেও অসিত ভট্টাচার্য বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যান।
ইটাখোলা অভিযানের সময় তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে আইএসসি’র পরীক্ষার্থী ছিলেন।অসিত ভট্টাচার্যের দাদা বিধুভূষণ ভট্টাচার্য চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে মাস্টারদা সূর্য সেনের দলভুক্ত ছিলেন। ১৯৩০সালের ২২এপ্রিল চট্টগ্রামের অদূরে জালালাবাদ পাহাড়ে ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে শহিদ হন বিধুভূষণ ভট্টাচার্য। অসিত ভট্টাচার্যের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করে সে সময়ের সুরমা উপত্যকার অন্যান্য বিপ্লবী যাঁরা সিলেট জেলে অসিত ভট্টাচার্যের সহবন্দি ছিলেন, তাঁদের স্মৃতিচারণে অসিত ভট্টাচার্যের চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিয়মানুবর্তিতা, স্বদেশ প্রেমের যে উজ্জ্বল আদর্শ প্রতীয়মান হয়েছে সে বিষয়েও তার বক্তব্যে তুলে ধরেন নীহাররঞ্জন পাল।
সভাপতির ভাষণে হরিদাস দত্ত বলেন, যে স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন অসিত ভট্টাচার্য দেখেছিলেন,সেই দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে তিনি গভীর ব্যথিত হতেন।তাই ভালোই হয়েছে যে তাঁর মতো দেশের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন দেওয়া বিপ্লবী আগেই শহিদের মৃত্যুবরণ করেন। সবশেষে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সম্পাদক অশোক কুমার দেব।
উল্লেখ্য, ১৯৩৪ সালের ২ জুলাই সিলেট জেলের ফাঁসিমঞ্চে “স্বাধীন ভারত কি জয়” ধ্বনি দিয়ে উনিশ বছর বয়সে আত্মবলিদান করেন এই তরুণ বিপ্লবী।