একল অভিযানের পাঁচ দিবসীয় অভ্যাস বর্গ সম্পন্ন লঙ্গাইয়ে

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি। 
বরাক তরঙ্গ, ১৪ অক্টোবর : সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম এই আদর্শকে সামনে রেখে পাথারকান্দি লঙ্গাইতে সমাপ্ত হল একল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত আচার্য-আচার্যাদের পাঁচ দিবসীয় অভ্যাস বর্গ। সোমবার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তারা আহ্বান জানান, ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে সেবার মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে সমাজগঠনের পথে।এখানে পাবার কিছু নেই, আছে শুধু দেবার আনন্দ।

উদ্বোধনী পর্বে সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন হয় ব্রহ্মনাদ, গায়ত্রী মন্ত্র, সরস্বতী বন্দনা এবং অন্যান্য সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।সারা প্রাঙ্গণে তখন ভেসে বেড়াচ্ছিল গম্ভীর ও ভক্তিময় আবহ।

পরবর্তীতে সোনাখিরা সঞ্চের সভাপতি নয়ন দাস তার বক্তব্যে একলের লক্ষ্য ও দর্শন তুলে ধরেন। এরপর বক্তব্য রাখেন বিভাগ প্রমুখ সুব্রত চৌধুরী ও সংঘের ঘণশ্যাম কৈরী, যারা উপস্থিত প্রায় ত্রিশজন প্রশিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা দেন।

তারা বলেন, ত্যাগী ব্যাক্তি ছাড়া একলের মতো সংগঠনে কাজ করা অসম্ভব। একলে পাবার কিছু নেই, আছে শুধু দেবার আনন্দ, সমাজের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার তৃপ্তি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রান্ত গোরক্ষা প্রমুখ পংকজ শ্যাম।আত্মনির্ভর ভারত গঠনের বার্তা দিয়ে তিনি আচার্যদের উদ্দেশ্যে বলেন,আপনারা দেশগঠনের এক মহৎ সেবায় ব্রতী হয়েছেন। এই পথ কঠিন, কিন্তু লক্ষ্য মহৎ তাই নিজেকে দৃঢ়ভাবে তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে শ্রেষ্ঠ ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি গ্রামকে আদর্শ গ্রাম, প্রতিটি অঞ্চলকে আদর্শ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”

পংকজ শ্যাম আত্মনির্ভরতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, স্বদেশী উৎপাদন ও প্রযুক্তির ব্যবহার, ‘স্ব-কা জাগরণ’, এবং হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতির সংরক্ষণই ভারতের পুনরুত্থানের মূল ভিত্তি। পঙ্কজ শ্যাম তাঁর বক্তব্যে দেশীয় গোমাতার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করে বলেন, একজন গোমাতা আমাদের অমৃততুল্য দুধ, অমূল্য গোবর ও গোমূত্র দান করেন। এগুলি কৃষিকাজে, দৈনন্দিন জীবনে ও ঔষধ তৈরিতে অপরিসীম উপকারী। ভারতের গো-সম্পদ আজ পশ্চিমা দেশগুলির নিকট আকর্ষণীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যদি নিজের ঘরের সম্পদকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।দীর্ঘ আলোচনা ও ভাবনাচিন্তার পর পূর্ণতা মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রথম দিবসের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে।

অংশগ্রহণকারী আচার্য-আচার্যাদের চোখে-মুখে ছিল দৃঢ় সংকল্প সেবাই আমাদের সাধনা, সমাজগঠনই আমাদের লক্ষ্য। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অঞ্চল প্রশিক্ষণ প্রমুখ রীতা ধর, পরিচালন সমিতির সভাপতি দাসীরাম গোয়ালা, প্রান্ত গোরক্ষা টোলির মণিকান্ত সিনহা, শিবু সিনহা, স্বপন সালিয়া, রাহুল উপাধ্যায়, হীরা রবিদাস, সঞ্চ প্রশিক্ষণ প্রমুখ রীণা রবিদাস ও সীমা কৈরী প্রমুখ।

পুরো অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন রিনা রবিদাস ও সীমা কৈরী। তাদের নিপুণ ব্যবস্থাপনা ও সবার সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে এক অনুপ্রেরণামূলক পরিসর।

এই পাঁচ দিবসীয় অভ্যাস বর্গ কেবল প্রশিক্ষণ নয়, ছিল আত্মজাগরণের এক নতুন সূচনা। একল অভিযানের মূল বাণী যেন আবারও প্রতিধ্বনিত হল লঙ্গাই উপত্যকায় একল মানে একা নয়, একল মানে একতার জাগরণ।সেবাই শক্তি, সংস্কারই মূল, আত্মনির্ভরতাই শ্রেষ্ঠ ভারতের পথপ্রদর্শক।

Spread the News
error: Content is protected !!