জুবিনের মঞ্চজীবনের আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর ট্র্যাজেডি: বসন্তকুমার
অসম সাহিত্য সভার আয়োজনে সর্বজনীন অন্ত্যেষ্টি এবং স্মৃতিচারণ
বরাক তরঙ্গ, ৪ অক্টোবর : “জুবিন গর্গের মঞ্চজীবনের বহিঃপ্রকাশের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর ট্র্যাজেডি”— এমন মন্তব্য করেন অসম সাহিত্য সভার সভাপতি ড. বসন্তকুমার গোস্বামী। শনিবার গুয়াহাটির আমবাড়িস্থ ভগবতীপ্রসাদ বরুয়া ভবনে অসম সাহিত্য সভা এবং লোক পরিবেশ্য কলা সংরক্ষণ ও সংবর্ধন উপ-সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অসমিয়ার হৃদয়ের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং অভিনেতা জুবিন গর্গের সর্বজনীন আদ্যশ্রাদ্ধ ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তব্য রাখেন।
ড. গোস্বামী বলেন, “জুবিন গার্গ ছিলেন অসমের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী প্রতীক। তার সংগীত অসমকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করেছে। তার গানে সমাজের আশা, বেদনা, আনন্দ, প্রেম এবং প্রতিবাদ একত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। তার অনুপস্থিতি অসমের সংগীত জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে।”
সকাল ১০টা থেকে আনন্দনগর নামঘরে দীপক হালৈ, মৃগাক্ষী তামুলি এবং তাদের সঙ্গীতদলের নাম-সংকীর্তনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জুবিন গর্গের প্রতিচ্ছবিতে উপস্থিত জনগণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ সব ধর্মের ধর্মগুরু ও প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।
এরপর শুরু হয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। অসম সাহিত্য সভার গুৱাহাটী কার্যালয়ের সম্পাদক ড. সঞ্জীব কুমার শর্মা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন। সভার প্রধান সম্পাদক দেবজিত বড়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জুবিন গার্গ শুধুই একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন না, তিনি অসমিয়া জাতির জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক, যার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে অসমীয়ার ব্যথা, প্রেম ও স্বপ্ন।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদৌ অসম ছাত্র সংসদ, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ, বড়ো সাহিত্য সভা, বাংলা সাহিত্য সভা, দেউরী সাহিত্য সভা, কার্বি লামেট আমেই, ডিমাসা সাহিত্য সভা, নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সাহিত্য পরিষদ, মিসিং সাহিত্য সভা, শরণিয়া কছারি সাহিত্য সভা, রাভা সাহিত্য সভা, গারো সাহিত্য সভা, তিয়া সাহিত্য সভা, সাংমা উন্নয়ন সমিতি, মার লিটারারি সোসাইটি, কুকি এপে’ বডি, জেমি পরিষদ, সোণোয়াল কছারি সাহিত্য সভা, মরাণ সাহিত্য সভা, তাই সাহিত্য সভা, নেপালি সাহিত্য সভা, মদাহি সাহিত্য পরিষদ, চা জনগোষ্ঠী সাহিত্য সভা, কোচ রাজবংশী সাহিত্য সভা, মটক সাহিত্য সম্মিলন, গরিয়া-মরিয়া-দেশী-চৈয়দ-জোলহা ঐক্য মঞ্চ, অল অসম ইন্ডিজেনাস মুসলিম’স হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড রিচার্স ফাউন্ডেশন কামরূপ মহানগরের বাঙালি পরিষদ, সৈয়দ কল্যাণ ট্রাস্ট, মৈতেই সাহিত্য সভা, মণিপুরি সাহিত্য সভার সভাপতি, সম্পাদক ও প্রতিনিধিবৃন্দ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ মিহিরকুমার বরুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য ধীরেন শর্মা, কন্দৰ্প কুমার শর্মা, কোষাধ্যক্ষ মণিরাম লাহন, অনুবাদ প্রকল্প আহ্বায়ক হৃদয়ানন্দ গগৈ, গুয়াহাটি অধিবেশনের আদরণীয় সমিতির সভাপতি ড. হীরালাল বরা, স্থায়ী অর্থ তহবিল আহ্বায়ক গোবিন্দ কলিতা, উপ-সমিতির কার্যকরী সভাপতি কমলকৃষ্ণ দাস, তথ্য প্রযুক্তি উপ-সমিতির আহ্বায়ক স্বৰ্গজ্যোতি চেতিয়া, উপ-সভাপতি অঞ্জনা গগৈ, বিশিষ্ট অভিনেতা অতুল পাচনি, সঙ্গীতশিল্পী রূপম ভুঁইয়া, দিগন্ত ভারতী, কবি আনিস উজ জামান, দীপক বরুয়াৱা সহ বহু শিল্পী, সাহিত্যিক এবং জুবিনের অগণিত অনুরাগী।
শেষাংশে মহিলাদের ‘থিয় নাম’, লোকগান এবং মাজুলীর ‘বরবায়ন’ দলে পরিবেশিত গায়ন-বায়ন উপস্থাপিত হয়। এরপর লোক পরিবেশ্য কলা সংরক্ষণ ও সংবর্ধন উপ-সমিতির আহ্বায়ক চৈয়দ মারুফ হোসেন শলাগর শরাই (সম্মানসূচক স্মারক) প্রদান করেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।