শ্রীভূমি জেলার কিছু এলাকায় সর্বাত্মক, কোথাও মিশ্র প্রভাব বনধের
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ৬ সেপ্টেম্বর : করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনকে ঘিরে আহূত বনধের আংশিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় জেলায়। কিছু কিছু স্থানে পিকেটার ছাড়াই বনধ সর্বাত্মক আবার কিছু এলাকায় যথারীতি ছিল সবকিছুই। কিন্তু জেলা সদরে ছিল অন্যরূপ। সেখানে ছিল পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। পিকেটার বনাম বনধ বিরোধীর মধ্য়ে হাতাহাতির মতো হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত হয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয়তা ছিল লক্ষণীয়। জেলাসদরে মোট ৬৪ জনকে এদিন পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ দিন সকালে শহরের সদর পোস্ট অফিসের গলিতে বনধ আহ্বানকারী বনাম শ্রীভূমি সমর্থনকারীদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরবর্তীতে মারপিঠের ঘটনা সংঘটিত হয়। আহত হন জেলাপরিষদ সদস্যা অর্চনা দত্ত সরকার। অন্যদিকে জেলা আয়ুক্ত কার্যালয়ের প্রবেশ পথে দেওয়ান আব্দুল হেকিম চৌধুরীর নেতৃত্বে পিকেটাররা প্রতিবাদ সাব্যস্ত করেন। অন্যদিকে অরুণাংশু ভট্টাচার্য, সুজিত কুমার পাল, বিশ্বজিৎ ঘোষরা স্থানে স্থানে নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করেন। শহর সংলগ্ন সাদারাশি, টিলাবাজার সহ অন্যান্য এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৬৪ জন পিকেটারকে আটক করা হয়। পরে বিকেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ দিকে, বদরপুর বাজার সহ জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন -সংস্থা, যানবাহন চালক -মালিক সংস্থা, ব্যবসায়ী ও জনগণ।কিছু সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল, রাস্তায় কিছু সংখ্যক দুরপাল্লার মাল বোঝাই গাড়ি ও কয়েকটি ব্যক্তিগত যানবাহন, অটো, ই-রিকশা চলাচল করে। জেলার প্রসাশনিক ব্যবস্থা ছিল কঠোর। জেলা প্রশাসন সমস্ত জেলায় বিএনএস ধারা ১৬৩ জারি করে। এদিন বিভিন্ন স্থানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বসেন আন্দোলনকারীরা আর বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলে এলাকা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বদরপুর নবীনচন্দ্র কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বদরপুর পুলিশ পিকেটার্রস সহ ছাত্র ছাত্রীদের আটক করে এবং মৃদু লাঠিচার্জ করে। এতে আন্দোলনকারীরা আরোও তীব্র হয়ে উঠে আর স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ রণংদেহী হয়ে উঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে। এতে প্রায় পঞ্চাশ জন ছাত্রছাত্রী আহত হন। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে শ্রীগৌরী হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রায় পনেরো পড়ুয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয় আর বাকিদের ভর্তি করানো হয়। তারমধ্যে চারজন কলেজ ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর এরা চিকিৎসাধীন।

কালীগঞ্জ বাজারে একইভাবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ সবাই সক্রিয়ভাবে এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে শান্তিপ্ৰিয় ভাবে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন। রাতাবাড়ি কাজিরবাজারে সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়। সমগ্ৰ জেলার সঙ্গে রাতাবাড়ি অঞ্চলেও হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বন্ধের সমর্থন জানান। কোনও ধরনের পিকেটিং ছাড়া ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোকান পাট বন্ধ রাখেন। রাস্তায় যানচলাচল ছিল খুবই অল্প। ধর্মঘটের রামকৃষ্ণনগর শহর বা শহরতলীতে কোন প্রভাব পড়েনি। রামকৃষ্ণনগর শহর সহ দুল্লভছড়া, নিভিয়া, চেরাগি এলাকার দোকানপাট স্কুল কলেজ ও হাটবাজার খোলা ছিল। নিভিয়া থেকে শিলচর গামী অসম পরিবহন নিগমের আওতাধীন যাত্রীবাহী বাসগুলোকে চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়া সড়কে অটোরিকশা সহ ছোট যানবাহন ও প্রতিদিনের মতোই চলাচল করে। দুল্লভছড়া রেল স্টেশন থেকে শিলচরগামী ৫৫৬৮৭ নম্বরের প্যাসেঞ্জার ট্রেন তার নির্ধারিত সময়ে ছুটে যায়। নিভিয়া স্থিত বোধন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, দুল্লভছড়ার চরগোলা ভ্যালি পাবলিক স্কুল, রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ও রামকৃষ্ণনগর কলেজ সহ এলাকার সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথারীতি পাঠদান চলে।