শিলচরে ভুবন মেলা নিয়ে প্রস্তুতি সভা, জনসুরক্ষায় জোর মন্ত্রী কৌশিক রায়ের
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৫ ফেব্রুয়ারি : আসন্ন ভুবন মেলা ২০২৫-কে সাফল্যমণ্ডিত ও নিরাপদ করে তোলার লক্ষ্যে শনিবার শিলচরে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নতুন সম্মেলনকক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন খাদ্য, গণবণ্টন ও ভোক্তা বিষয়ক, খনি ও খনিজ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী কৌশিক রায়। তিনি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরাপদ আয়োজন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী কৌশিক রায় ভুবন মেলার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্তের সমাগম এই মেলায় হয়। সেই কথা মাথায় রেখে সমস্ত পরিষেবা যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে নির্দেশ দেন। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, স্যানিটেশন, পানীয়জল সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

মেলাস্থলে যাতায়াত সহজ করতে রাস্তাঘাট সংস্কারের বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বিশেষ করে কৃষ্ণপুর এবং মতিনগর দিক থেকে সংযোগের উন্নতির জন্য অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়। এই কাজের দায়িত্ব মেলা কমিটি এবং বনবিভাগের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি (PHE) বিভাগকে মেলার সময় পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়, যেখানে স্থানীয় মেলা কমিটিও সহযোগিতা করবে।
স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রেখে মেলাপ্রাঙ্গণে ১০০টি অস্থায়ী শৌচাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের বিশ্রামের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিশ্রামশিবিরের ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়াও, দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে গণপরিবহণের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করবে জেলা প্রশাসন।

মেলাস্থলে চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মেডিক্যাল টিম এবং সম্পূর্ণ সজ্জিত অ্যাম্বুলেন্স রাখা হবে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য ২৪ ঘণ্টা ১০৮ পরিষেবা চালু থাকবে। সোনাই, ধলাই, পালংঘাট এবং কচুদরম এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (PHC) এবং মিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে আসাম পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (APDCL) এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ক্ষেত্রে ১০টি জেনারেটর ব্যাকআপ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে একাধিক সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে লক্ষীপুরের সমজেলা আয়ুক্ত এবং চক্র আধিকারিক, লক্ষীপুর থানা এবং কচুদরম, ধলাই ও সোনাই পুলিশের যৌথ দায়িত্বে থাকবে মেলাপ্রাঙ্গণ। চক্র আধিকারিকগনকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, যানজট এড়াতে ডিএসপি হেমেন দাস একটি বিশেষ ট্রাফিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী চক্র স্তরের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার মূল প্রবেশদ্বার কৃষ্ণপুর এবং মতিনগর প্রান্তে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। তার আগে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে একটি পরিদর্শন দল মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখবে। এই দলে থাকবেন জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত যুবরাজ বরঠাকুর, অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, অন্তরা সেন, ধলাই বিধায়ক নীহার রঞ্জন দাস, বিজেপি জেলা সভাপতি,রূপম সাহা, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি, APDCL, বনবিভাগ এবং দুই মেলা কমিটির সদস্যরা।
উল্লেখ্য, সভায় জানানো হয়, জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (DDMA) মেলাস্থলে নিরাপত্তা তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং জেলা বিপর্যয় ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের “আপদমিত্র” টিমগুলি পালা করে আট ঘণ্টার শিফটে কাজ করবে, এবং শীঘ্রই তাদের জন্য নির্দিষ্ট ডিউটি তালিকা প্রকরা হবে।
জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব সভা শেষে তার বক্তব্যে , ভুবন মেলা ২০২৫-কে দুর্ঘটনামুক্ত এক অনন্য উৎসব পালন করার লক্ষ্যে সমস্ত বিভাগকে কঠোর নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করার নির্দেশ দেন ।
সকল বিভাগের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভুবন মেলা ২০২৫ একটি সুরক্ষিত, শান্তিপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা হবে বলে সভায় উপস্থিত সকলে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।