“মানব পাচার ও ডাইনি অপবাদ নির্মূলে দৃঢ় প্রত্যয়—কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদবের আহ্বান
সচেতনতা অভিযানে জেলাজুড়ে জাগরণ_____
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ জুলাই : মানব পাচার ও ডাইনি অপবাদের মতো বিভৎস সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক সচেতনতা অভিযানের নেতৃত্ব দিলেন কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব। সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়ে, এই দুই ঘৃণ্য প্রথার বিরুদ্ধে জেলাজুড়ে এক প্রাণবন্ত এবং বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে কাছাড় জেলা প্রশাসন। জেলা মহিলা ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের সহায়তায় ২৮ ও ২৯ জুলাই তারিখে জেলার ১৬টি আইসিডিএস প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। লক্ষ্য, আইনের মাধ্যমে শক্তি, হৃদয়ে সহমর্মিতা এবং সচেতনতায় রূপান্তর আনয়ন।
গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শিলচরের কেন্দ্রে পর্যন্ত বিভিন্ন র্যালি এবং আইন-সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রচারাভিযান প্রাণ পায়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, পুলিশ এবং যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই উদ্যোগ পায় গতি। বার্তাটি ছিল স্পষ্ট, এই অপরাধের অবসান এখনই জরুরি।
প্রচারের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২৯ জুলাই জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা-স্তরীয় সচেতনতা সভা। ‘সঙ্কল্প: হাব ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ উইমেন’ নামক সংস্থার উদ্যোগে জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব।

অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত (মহিলা ও শিশু উন্নয়ন) হেমাঙ্গ নবীশের উপস্থিতিতে, সহকারী আয়ুক্ত তথা জেলার ভারপ্রাপ্ত সমাজকল্যাণ আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী সভায় স্বাগত ভাষণ দেন এবং উল্লেখ করেন যে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে একসঙ্গে কাজ করাই হবে আসল সাফল্যের মূলমন্ত্র। “আমরা শুধু অনুষ্ঠান করছি না, আমরা মনোভবের পরিবর্তন আনতে চাই,”বললেন অঞ্জলি কুমারী।
জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব তাঁর ভাষণে বলেন, “মানব পাচার ও ডাইনি অপবাদ শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, এগুলো মানুষের মর্যাদার উপর বর্বর আঘাত। আমাদের সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত, সচেতন এবং সুরক্ষিত করে তুলতে হবে।” তিনি সকলকে এগিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।

আইন বিষয়ক অধিবেশনে, জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের লিগ্যাল এইড কাউন্সেল এডভোকেট ধর্মানন্দ দেব ‘অসম মানব পাচার বিরোধী ও ডাইনি অপবাদ প্রতিরোধ নীতি’ বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেন। আইনের শক্তিকে জনগণের হাতের শক্তি করে তোলার বার্তা দেন তিনি।
পুলিশ বিভাগের তরফে উপ-পরিদর্শক শ্রীমতী মহেশ্বরী দাস জেলা জুড়ে মানব পাচারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর অভিজ্ঞতাভিত্তিক বক্তব্যে উঠে আসে সমাজে আরও সতর্কতা, দ্রুত অভিযোগ দায়ের এবং জনতা-পুলিশ অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই এক জেলাস্তরীয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়, যা জেলা উপায়ুক্ত কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শিলচরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথ অতিক্রম করে। হাতে প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে স্লোগান আর সমাজবদলের আহ্বান নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন।
এই উদ্যমী প্রচার অভিযান শুধুই একটি কর্মসূচি নয়, এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের আন্দোলনের সূচনা। আইনগত সচেতনতা, তৃণমূল স্তরের সংযোগ ও আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতার মাধ্যমে কাছাড় জেলা প্রশাসনের এই প্রয়াস প্রশাসনের মানবিক মুখ ও সুশাসনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।