নাচ-গানে পাথারকান্দি সমজেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ভূপেন হাজারিকাকে

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি। 
বরাক তরঙ্গ, ৮ সেপ্টেম্বর : সুরের জাদুকর, জীবনমুখী গানের কবি, মানবতার কণ্ঠস্বর ভারতরত্ন সুধাকণ্ঠ ড. ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহে যখন ভেসে উঠল তাঁর অমর সুর, তখন পাথারকান্দির আকাশ-বাতাস যেন ভরে উঠল আবেগে। নাচ-গান, আবৃত্তি আর শিল্প-সাধনার সমন্বয়ে আয়োজিত শতবর্ষের সন্ধ্যায় এক অনন্য আবহে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাল পাথারকান্দি সমজেলা প্রশাসন। শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এ যেন ছিল শিল্পীর প্রতি এক গানে-গানে শ্রদ্ধাঞ্জলি, যা দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে রইল।

এক অনন্য ভাবগম্ভীর অথচ প্রাণবন্ত পরিবেশে, ভারতরত্ন সুধাকণ্ঠ ড. ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করল পাথারকান্দি সমজেলা প্রশাসন। ভূপেন হাজারিকার গানের অমর বাণী— মানুহে মানুষর লগত ভাইভাই— যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহে, যেখানে নৃত্য, সঙ্গীত ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে আয়োজন করা হয় “শতবর্ষের সন্ধ্যা” শীর্ষক এক বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

অসম সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সোমবার সন্ধ্যা পাঁচটায় পূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। উদ্বোধনী গান “আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়”–এর সুর ভেসে ওঠে, আর তার সঙ্গে ছোট্ট শিল্পী সৃজিতা সেনের নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের আবেগে ভাসিয়ে দেয়। অনুষ্ঠানের সূচনা মুহূর্তে সমজেলার অতিরিক্ত আয়ুক্ত রূপক মজুমদার স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে বলেন— “ভূপেন হাজরিকা শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাণস্বর, যিনি গান দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছেন।”

এরপর একে একে মঞ্চে আসেন স্থানীয় শিল্পীরা— তৃষিতা দাস, চন্দ্রানী পাল, দেবাঙ্গকুমার পাল, রুচিতা দেব, রিমা দেব, প্রাচী শ্যাম, কনিষ্কা দেবনাথ ও পারমিতা পাল। তাঁদের কণ্ঠে এবং পদক্ষেপে ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত সঙ্গীত ও জীবনমুখী গানের রূপায়ণ দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। গান আর নাচের সমন্বয়ে মঞ্চ যেন হয়ে ওঠে ভূপেনের গানের জগৎ— “বিস্তীর্ণ পরাশে”, “গঙ্গারঙা নদী”, “মানুহে মানুষর লগত”–এর সুরে গড়ে ওঠে এক অনন্য আবহ।

দিনের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হয় ভূপেন হাজরিকার জীবনদর্শন ও সৃষ্টিকর্মকে কেন্দ্র করে রচনা প্রতিযোগিতা ও কুইজ। সন্ধ্যার আসরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণ দর্শক, সবার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে স্মরণীয়।

সম্মানীয় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সার্কল অফিসার বলীনবাবা বালারী, অদিতি নুনিসা, পাথারকান্দি খণ্ড উন্নয়ন আধিকারিক অজয় গার্গী, শিক্ষাবিদ শ্যামাপদ দে, বিজেপির পাথারকান্দি মণ্ডল সভাপতি শশীবাবু সিনহা, কৃষ্ণ দেবনাথ, সিদ্ধার্থ শেখর পাল চৌধুরী প্রমুখ।

সন্ধ্যার শেষাংশে জাতীয় সঙ্গীতের আবহে সমাপ্তি ঘটে অনুষ্ঠানের। তবে দর্শকমণ্ডলীর চোখে-মুখে স্পষ্ট ছিল ভূপেন হাজারিকার অমর বাণীর ছাপ সঙ্গীত দিয়ে সমাজকে বদলানো যায়, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার জয় সম্ভব।

এই সন্ধ্যা প্রমাণ করল ভূপেন হাজারিকা শুধু গানের শিল্পী নন, তিনি সময়ের স্রষ্টা, যিনি শতবর্ষ পেরিয়েও মানুষের হৃদয়ে সমানভাবে বেঁচে আছেন।

Spread the News
error: Content is protected !!