গ্রামগঞ্জের তরুণী ও মহিলাদের কাজের প্রলোভন দিয়ে ভিনরাজ্যে বিক্রি! ফাঁদ থেকে পালিয়ে আসা তরুণী হুমকির মুখে

২৮ সেপ্টেম্বর : ভাঙা দরজা হাট করে খোলা। বাইরের পথ চেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় মা একমাত্র কন্যার আশায়। শেষরাতে কয়েকশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিধ্বস্ত হৃদয় ও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মায়ের ঘরে ফিরলেন মেয়ে ঠিকই। কিন্তু তারপর থেকে আতঙ্ক আর নানা আশঙ্কায় প্রহর কাটছে ছাব্বিশ উত্তীর্ণ ওই তরুণীর। ফলে জগজ্জননী দুর্গার মর্ত্যে আগমন হলেও মন বিষণ্ণতায় ডুবে আছে রায়গঞ্জের দুর্গার। এই বুঝি আবার পাচারকারীর ফাঁদে সব শেষ না হয়ে যায়! এভাবেই কাজের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামগঞ্জের তরুণী ও মহিলাদের ভিনরাজ্যে নিয়ে গিয়ে এক অন্ধকার জগতের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে এক অসাধু চক্র। সেখান থেকে বের হয়ে আসার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হচ্ছে না। অন্ধকার জগতের মধ্যে ডুবে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অন্ধকার জীবন থেকে একরাশ যন্ত্রণা ও আতঙ্ক নিয়ে অবশ্য বেরিয়ে আসতে পেরেছেন রায়গঞ্জের বড়ুয়া অঞ্চলের এক গৃহবধূ।

গল্পটা এমন, ওই গৃহবধূকে দালালচক্রের এক মহিলা এজেন্ট ৩০ হাজার টাকা মাসমাইনের টোপ দেয়। ঝাড়খণ্ডে নাচের টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না থাকায় এবং বাড়িতে একটি ১০ বছরের সন্তান থাকায় তিনি রাজি হয়ে যান। এজেন্ট মারফত ১০ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডে রওনা দেন তিনি। সেখানে পৌঁছে গিয়ে দেখেন, তাঁদের জন্য ঘর বরাদ্দ আছে। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সকলের। রায়গঞ্জের অনেকেই রয়েছেন সেখানে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ভুল ভাঙে তাঁর। বুঝতে পারেন হোটেল ও জলসায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো হচ্ছে। বিষয়টি টের পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ফন্দি আঁটেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জের এক তরুণীর সঙ্গে স্টেশনে এসে কোনওমতে ট্রেনে উঠে কাটিহার এবং তারপর রায়গঞ্জে ফিরে আসেন। শনিবার ওই তরুণীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তাঁর চোখেমুখে আতঙ্ক। তিনি জানান, তাহেরপুর গ্রামের এক মহিলা এজেন্ট তাঁকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি বাড়িতে যাতে আসতে না পারেন সেজন্য দুজন ছেলে পাহারায় রাখা হত। তরুণী বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে ২৪ তারিখ সুযোগ বুঝে কোনওমতে পালিয়ে আসি। ওরা স্টেশনে এসে খোঁজাখুঁজি করলে শৌচাগারে লুকিয়ে যাই। রায়গঞ্জে আসার পর এখন শুধু হুমকি আসছে। চুরির বদনাম দেওয়া হচ্ছে। যে সাত হাজার টাকা আমাকে অগ্রিম দিয়েছিল তা ফেরত দিতে চাইলেও আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি।’ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে জানিয়েছেন ওই তরুণী। বিজেপি সদস্য মানিক বর্মন ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিন বিকেলে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রতারিত ওই তরুণী রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভবানন্দ বর্মন বলেন, ‘পুলিশ দু’দিন অপেক্ষা করতে বলেছে। জানাজানি হলে আসামিরা পালিয়ে যাবে।’
বড়ুয়া অঞ্চলের কমপক্ষে ১০ জন তরুণী ও মহিলাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভিনরাজ্যে পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েকদিন আগে নোয়াপাড়া সংসদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে সিজগ্রাম থেকে একই অভিযোগ এসেছিল। প্রধান বলেন, ‘দারিদ্র্য, দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই কিছু অসাধু ব্যক্তি মহিলাদের ভিনরাজ্যে পাচার করছে। তবে এই মহিলা নিজের বুদ্ধির জোরে পালিয়ে এসেছেন।’

মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি বলেন, ‘নিজের যোগ্যতা জেনেই কোনওপ্রকার প্রলোভনে পা না দেওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের বাইরে কাজে পাঠানোর ব্যাপারে পরিবারেরও সম্মতি থাকে। এক্ষেত্রে নিজেদের সচেতন হতে হবে।’