জাটিঙ্গা-লামপুরে রেলওয়ে লাইনে ভূমিধস পরিদর্শন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জিএম শ্রীবাস্তবের
বরাক তরঙ্গ, ২৬ জুন : কয়েক দিন ধরে পাহাড়ি লাইন জাটিঙ্গা-লামপুর ট্র্যাকে ধসের ফলে রেল পরিসেবা বন্ধ। ধসে বেশ কয়টি দূর পাল্লার ট্রেইন ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।মাটি সারাইয়ের কাজে লাগানো হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিককে।প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধস সারাইয়ের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন উত্তর-পূর্ব সিমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার চেতন শ্রীবাস্তব। গোটা পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখে রেলওয়ে বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার চেতন শ্রীবাস্তব জানান, জনসাধারণের যাতায়াত পরিসেবার কথা মাথায় রেখে তীব্র থেকে তীব্রতর গতিতে রেলওয়ে ট্রেকের মাটি সারাইয়ের কাজ চলছে। প্রায় ১৫টি এস্কেকেভেটর দিয়ে দিনরাত চলছে ধস সারাইয়ের কাজ। কিন্তু পাহড়ে অবিরাম বৃষ্টির জন্য কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আগামী সোমবারের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
রেলওয়ে বিভাগের প্রত্যেক কর্মীকে দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রেলওয়ে লাইনের উপর থেকে মাটি ও পাথর সরানো হচ্ছে। ধস পতনের পর বিভাগীয় কর্মীদের তৎপরতায় খবর পেয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের আধিকারিকরা গুয়াহাটিতে বৈঠক করে তড়িঘড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। যাত্রীদের নানাভাবে বোঝানোর পাশাপাশি প্রত্যেকের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ দূর পাল্লার বেশ কয়টি ট্রেন পরিসেবা বাতিল করে দেন। পাশাপাশি যাত্রীদের টিকিটের ১কোটি টাকা ফেরৎ দিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ। যাত্রীদের সফল যাত্রা প্রদানে ভারতীয় রেলওয়ে বদ্ধপরিকর।বর্তমানে গোটা রেলওয়ে বিভাগ এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৩দিনের মাথায় রেলওয়ে পরিসেবা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী জেনারেল ম্যানেজার চেতন শ্রীবাস্তব। তবে রেলওয়ে প্রোটেকশনের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হতে প্রায় ১মাস সময়সীমা লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ধস সারাইয়ের পর ১০০মিটার পথ দিয়ে যেসব ট্রেন বের হবে সেগুলো ধীরে চালানো হবে। এবং ১০০মিটার অতিক্রম করার পর ট্রেন স্বাভাবিক স্পিডে চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জিএম আরও জানান, লঙ্কা থেকে ময়নারবন্দ পর্যন্ত ১৬০কিলোমিটার লাইনের সার্ভে চলছে। রেলমন্ত্রী এসে জায়গার নিরীক্ষণ করে গেছেন। এটি ভারতীয় রেলওয়ের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা। যা নির্মাণ করতে ৩০হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। শীঘ্রই অর্থ মঞ্জুর হবে এবং আগামী ৫বছরের মধ্যে লঙ্কা থেকে ময়নারবন্দ পর্যন্ত ১৬০কিলোমিটার রেলওয়ে লাইনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন জিএম চেতন শ্রীবাস্তব। বর্তমানে ধস সারাইয়ের কাজ জোর গতিতে চলছে। খুব শীঘ্রই মিজোরাম, মনিপুর ও ত্রিপুরা সহ বরাকের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে এদিন আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে মহিষাশনের জনগণ তাদের কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। জনগণের সেই দাবি পূরণ করতে উত্তর-পূর্ব সিমান্ত রেলওয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সরকারের সহায়তায় শীঘ্রই স্থানীয়দের সমস্যার সমাধান হবে বলেও এদিন জানিয়েছেন জিএম চেতন শ্রীবাস্তব।
এদিকে, পাহাড়ি এলাকায় অবিরাম বর্ষুণে ফলে সড়ক পথেও বিঘ্ন ঘটেছে।শিলচর-সাফলং সংযোগকারী সৌরাষ্ট্র মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে ধস পতন অব্যাহত রয়েছে।মুশলধারা বৃষ্টি পাতের ফলে মারুয়াছড়া ও টিবং সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে শিলচর-গুয়াহাটির যাতায়াত পরিসেবা।সড়ক পথে ভূমি ধস পড়ায় প্রভাব পড়েছে মিজোরাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে। সড়কের উপর পন্যবাহী লরি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওয়ায় বাহন চালকদেরকেও দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এদিকে, সড়কে জমে থাকা মাটি ও পাথর সারাইয়ের কাজ চললেও, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ধস পতন সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বিভাগীয় কর্মীরা। লাগাতার ধস পতনের ফলে সড়ক ও রেলপথ বিচ্ছিন্ন হাওয়ায় সাধারণ মানুষ সহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বর্তমানে প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। দুর্ভোগে নাজেহাল মানুষ প্রহর গুনছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার।