বাঙালিদের সজাগ-সচেতন থাকার আহ্বান গৌতমপ্রসাদের
জগন-জিসু স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি বরাকবঙ্গের_____
বরাক তরঙ্গ, ২১ জুলাই : ১৯৬১ সালের ১৯ মে এগারোজনের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার অধিকার অর্জিত হয়েছিল। সেদিন মনে হয়েছিল, ভাষাদ্বন্দ্ব মিটে গিয়েছে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে রাজ্য জুড়ে পঠনপাঠনে অসমিয়া বাধ্যতামূলক করা হল। সে বারও জগন-জিসুর প্রাণের বিনিময়ে ওই নির্দেশ স্থগিত হয়। কিন্তু ভাষা আগ্রাসন মোটেও শেষ হয়নি। বরং নিত্য তার চেহারা বদলাচ্ছে, জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এই সময়ে বাঙালিদের অত্যন্ত সজাগ-সচেতন থাকতে বললেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত।
সোমবার শিলচর বঙ্গভবনে শহিদ জগন-জিসু স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মেলনের শিলচর শহর আঞ্চলিক সমিতি। সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়ে গৌতম দত্ত আরও বলেন, শুধু বাইরে থেকে বাঙালিবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে, এমন নয়। তুচ্ছ লাভালাভের আশায় একাংশ বঙ্গভাষীও তাতে সামিল রয়েছেন। এরাই বেশি মারাত্মক।
কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মিলন উদ্দিন লস্করও বাঙালির মধ্যেকার বিভাজনের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অসম আন্দোলনের সময় যখন বিদেশি বিতাড়ন আন্দোলন হচ্ছিল, বাঙালি মুসলমানরা ভাবছিলেন, হিন্দু বাঙালিদের বিতাড়িত করা হবে। সে জন্য তাঁরা নীরব ছিলেন। অনেকে নিজেদের ন-অসমিয়া বলেও পরিচয় দেন। আজ যখন বাঙালি মুসলমানদের নথিপত্র প্রদর্শনের সুযোগ না দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে, পুশব্যাক করা হচ্ছে, তখন হিন্দু বাঙালিরা একই ভাবে সমস্যাটা মুসলমানের বলে মনে করছেন। কিন্তু ভাষাপীড়নকে বাঙালির সমস্যা বলে যতদিন না মনে করা হবে, ততদিন এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন মিলন উদ্দিন।

এ দিনের আলোচনায় অংশ নেন আঞ্চলিক সমিতির সম্পাদক সুশান্ত সেন, সীমান্ত ভট্টাচার্য, শৈবাল গুপ্ত, রঞ্জিত চৌধুরী ও সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাপী রায় ও সঞ্জয় দেব লস্কর। রণধীর চক্রবর্তী রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি করে এবং শিপ্রা দে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. শুভাশিস রায়চৌধুরী, অমল দাস, উত্তমকুমার সাহা প্রমুখ।