গ্যামন সেতু বন্ধ, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পারাপার, দুর্ভোগ

অনিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ২২ মে : গ্যামন সেতু বন্ধ হওয়ার আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন। নদী পারাপারে অভ্যস্থ না থাকায় স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা চরম দুর্ভোগের শিকার। শুরু তা নয় একটি ট্রলার দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে সমস্যা আরও দ্বিগুণ।

বুধবার সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের বরাক নদীর উপর অবস্থিত কাটিগড়া-বদরপুর সংযোগকারী সেতুটি। এতে অসংখ্য মানুষ এদিন কাটিগড়া ফেরি ঘাট দিয়ে বদরপুর গেছেন। আর ফেরার পথেও সেই নদী পথেই ফিরে আসেন। তখন এক যাত্রী সিলিন্ডার নিয়ে নদী ঘাট থেকে উপরে সড়কে উঠা মাত্রই অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন গ্যামন সেতুর বেহাল অবস্থা অনেক আগেরই, ইচ্ছা থাকলে সরকার মেরামত করতে পারতো, আজকের দিনে সাধারণ মানুষকে এই কষ্ট ভোগ করতে হতো না।

গ্যামন সেতু বন্ধ, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পারাপার, দুর্ভোগ

এদিকে মঙ্গলবার এনএইচআইডিসিএল একটি নোটিফিকেশন জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সেতুটি ৬০ দিনের জন্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। ২১ মে থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বরাক, ত্রিপুরা, মিজোরামের যাত্রীদের জন্য সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাছাড় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিকল্প হিসেবে রয়েছে কাটিগড়া-বদরপুরঘাট ফেরী সার্ভিস। কালাইন-শিলচর রোড এবং চৌরঙ্গী-রানিফেরি টিআরকে রোড। ফেরি সার্ভিসের জন্য যাত্রীদের চৌরঙ্গী বাজার থেকে আসতে হবে কাটিগড়া বাজার। কাটিগড়া থানার বিপরীতে রয়েছে ফেরীঘাট এবং বদরপুরঘাট লোকনাথ মন্দিরের পাশে রয়েছে অন্য প্রান্তের ফেরিঘাট। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ব্যবহারকারী ভারী যানবাহনগুলি শিলচর-কালাইন সড়ক ব্যবহার করতে পারবে। যাত্রীদের জন্য সেতু পারাপারে ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাধ্যমে ফেরি পরিষেবা শুরু করা হয়। কিন্তু এতেও অনেকেই চিন্তিত।

গ্যামন সেতু বন্ধ, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পারাপার, দুর্ভোগ

বুধবার সকালের দিকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় নদী পার হতে একাংশ ছাত্রছাত্রী ও যাত্রীদের কাছ থেকে দশ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সেটা কমিয়ে পাঁচ টাকা করা হয়। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী চার টাকা ধার্য রয়েছে বলে জানান ফেরি ঘাটের ইনচার্জ এস পাল, তিনি অবশ্য অতিরিক্ত জন প্রতি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কেন অর্থ নেওয়া হচ্ছে? বিষয়টি নিয়ে এদিনই বদরপুরের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কাটিগড়ার সার্কল অফিসারকে লিখিত স্মারকপত্র প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, নদী পারাপারের জন্য সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পযর্ন্ত ফেরি চলাচল করবে বলে জানান ফেরি ইনচার্জ পাল বাবু। কিন্তু দেখা গেছে, সেই সকাল থেকে রাত অবধি কাটিগড়া ও বদরপুরের মানুষের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে তারা কি করবেন? বুধবার এমন এক পরিস্থিতি সামনে এসেছে। এদিন রাত সোয়া আটটা নাগাদ কাটিগড়া ও বদরপুরে নদীর উভয় তীরে অসংখ্য যাত্রী, তবে ফেরি চালক ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ করে দিয়েছেন। যাত্রীদের কোনো অনুরোধ রাখতে পারছেন না চালক। চালকের কথার যুক্তি আছে, নদীর উভয় তীরে নেই আলোর ব্যবস্থা, নৌকোয় নেই কোনো লাইট, তিনি কিভাবে নৌকা নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের নদী পারাপার করবেন! একটা ঝুঁকি থেকেই যাবে।
সাধারণত, এপার ওপারে মানুষের রুটি রুজি যেমন জড়িত, ঠিক তেমনি পড়াশুনার ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীরা অন্য পারের উপর নির্ভরশীল। তাই বৃহত্তর জনসাধারণের স্বার্থে নদীতে ২৪ ঘণ্টা সম্ভব না হলেও, অন্তত সকাল পাঁচটা বা ছয়টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস চালু রাখা অত্যন্ত জরুরি। এমনটাই অভিমত পোষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

Author

Spread the News