গনিরগ্রামে ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভা, গঠিত কমিটি

গনিরগ্রামে ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভা, গঠিত কমিটি

বরাক তরঙ্গ, ১৬ অক্টোবর : বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অর্থ লুঠের যন্ত্র প্রিপেড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবিতে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে আগামী ২৮ অক্টোবর গুয়াহাটির জেলা গ্রন্থাগার ভবনে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অসম এর বিভিন্ন বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনের যৌথ বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিবর্তন সফল করতে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কোর্ডিনেশন কমিটি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গনিরগ্রাম বাজারে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন এর জেলা কোর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজু আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ ফয়সাল বড়ভূইয়া, সায়েদ আহমেদ বড়ভূইয়া, মতিকান্ত  সিনহা, সাহিদ আহমেদ লস্কর, আব্দুল কুদ্দুস লস্কর, এনামুল হক লস্কর, রেহান উদ্দিন বড়ভূইয়া, এএফ জাকারিয়া লস্কর, ইমাদ উদ্দিন মজুমদার, নজমুল হক বড়ভূইয়া, নজরুল ইসলাম বড়ভূইয়াদের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের অসম রাজ্য কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক হিল্লোল ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, দেশের একের পর এক রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রতিবাদে রাজ্য সরকার স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধ করে দিচ্ছে। গুজরাট, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকার জনগণের অভিযোগ শুনে তা বন্ধ করার দিকে এগিয়ে গেলেও অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এপথে হাটতে রাজি নন। অসমের প্রতিটি অঞ্চলে জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই প্রিপেড স্মার্ট মিটার বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। অনেকে স্মার্ট মিটার খুলে নিয়ে গিয়ে এপিডিসিএল কার্যালয়ে সমঝে দিয়েছেন। অতীতে এধরনের ঘটনা রাজ্যে ঘটেনি। এরপরও মুখ্যমন্ত্রীর স্মার্ট মিটারের পক্ষে সওয়াল করায় জনগণের মনে এর পেছনে দুর্নীতি হয়েছে কী না তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন ২০২২ সাল থেকেই প্রিপেড স্মার্ট মিটারের কুফল সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন করে আসছে। তিনি এও বলেন যে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দাবি সরকার ও এপিডিসিএল এর কাছে বারবার জানানো হয়েছে জনগণের অর্থ লুন্ঠনের যন্ত্র প্রিপেড স্মার্ট মিটার সরিয়ে নিতে হবে এবং পুরোনো ডিজিটাল মিটার পুনরায় গ্রাহকদের প্রদান করতে হবে।

গনিরগ্রামে ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভা, গঠিত কমিটি

সংগঠনের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব রায় বলেন, স্মার্ট মিটার আমজনতার কাছে আতংকের একটি নাম হয়ে গেছে। চোখে আঙুল দিয়ে সবার পকেটে লুট চালাচ্ছে এই যন্ত্র। বলপূর্বক জনতার উপর চাপিয়ে দেওয়া এই যন্ত্র থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতান্ত্রিক উপায়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা। তিনি বলেন সংগঠনের আহ্বানে গত ১১ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটির বিজুলী ভবনের সামনে কয়েক হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক সমবেত হয়ে প্রিপেড স্মার্ট মিটারের নামে জনগণের অর্থ লুন্ঠনের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শিলচরে তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে জনগণ মিছিলে সামিল হন। সরকারের জনগণের প্রতি সামান্য দরদবোধ থাকলে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধের নির্দেশ জারি করত। কিন্তু মুনাফাখোর আদানি, আম্বানির স্বার্থে সরকার জোর করে তা চাপিয়ে দিচ্ছে।

সংগঠনের কালাইন আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সামসুল ইসলাম লস্কর বলেন, এপিডিসিএল এর কালাইন সাবডিভিশন এর পক্ষ থেকে ঘোরপথে স্মার্ট মিটার চাপিয়ে দিতে এভারেজ বিল হঠাৎ করে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন এভারেজ বিল কোন অবস্থাতেই আইন সম্মত নয়। কারো মিটারে ত্রুটি হলে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তা পরীক্ষা করিয়ে টেষ্ট রিপোর্ট সহ তা পাল্টাতে লিখিত নির্দেশ তিন মাসের মধ্যে প্রদান করতে হয়। সেক্ষেত্রে যে ধরনের মিটার গ্রাহক ব্যবহার করতেন সেই একই ধরনের মিটার বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদানের নিয়ম রয়েছে। অথচ বছরের পর বছর এভারেজ বিল প্রদান করে এপিডিসিএল গ্রাহকদের বেআইনিভাবে বিল আদায় করছে এ অভিযোগ অনেকেই করছেন। তিনি অবিলম্বে এভারেজ বিল প্রদান বন্ধ করে পুরোনো মিটার টেস্টিং করিয়ে তা বিকল থাকলে তা পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার প্রদানের দাবি জানান। সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা নির্মল কুমার দাস বলেন প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের আসল উদ্দেশ্য হল বিদ্যুৎ খণ্ডকে কর্পোরেটদের মুনাফা অর্জনের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া। এই মিটার জনগণের টাকা লুঠের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের লক্ষ লক্ষ মিটার রিডারের চাকরি সমাপ্ত করে দিয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। তিনি এই মিটার সর্ববস্থায় বয়কটের আহ্বান জানান।

গনিরগ্রামে ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভা, গঠিত কমিটি

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাহিদ আহমেদ লস্কর সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সায়দ আহমেদ বড়ভূইয়াকে সভাপতি ও সাহিদ আহমেদ লস্করকে সম্পাদক মনোনীত করে ২৩ সদস্যের গনিরগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে এই আন্দোলন শক্তিশালী রূপ দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

Author

Spread the News