পাথারকান্দিতে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত ঈদ-উল আজহা

নিরবচ্ছিন্ন উৎসব পালনের সাক্ষী রইল গ্রামীণ জনপদ
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৭ জুন : আকাশে তখনো মেঘের আনাগোনা। অথচ মানুষের মুখে ছিল নিখাদ আনন্দের ঝলক। সময়টা ঈদের, অনুভূতির নাম কুরবানির। বৃহত্তর পাথারকান্দির প্রতিটি জনপদ যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল ত্যাগের মহিমায়, ভালোবাসার বন্ধনে। পাথারকান্দির প্রান্তরে শুধু ঈদের নামাজই নয়, উদ্যাপিত হয়েছে এক নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি, সহমর্মিতা ও ঐক্যের উৎসব। বর্তমান সময়ে বন্যার ভয়াবহতা ও লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে উপেক্ষা করে, বৃহত্তর পাথারকান্দি অঞ্চল এবারের পবিত্র ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন করল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতায়। উৎসবের প্রাক্কালে শনিবার সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে অঞ্চলজুড়ে। ধর্মীয় অনুশাসন আর ভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে এদিন ইদগাহ মাঠগুলো পরিণত হয় মিলনমেলায়। এবারের ঈদে পাথারকান্দি ও বাজারিছড়ার গ্রামগুলোতে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি ইদগাহ ময়দানকে যথাসম্ভব সাজিয়ে তোলা হয়। প্রাচীন সংস্কৃতি আর আধুনিক ভাবনাকে একত্রে মেলাতে তোরণ নির্মাণ, রঙিন পতাকা ও বেলুনে সুসজ্জিত করা হয় স্থানগুলো।
সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের নামাজ। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বৃহত্তর কটামণি এলাকার কটনপুর ঈদগাহ সহ এলাকার অন্যান্যা ঈদগাহে ঈদের নাম পাঠ করা সম্বব হওয়াতে কটনপুর গ্রামের ধমপ্রাণ সুসল্লিরা কটামণি বাজার জামে মসজিদ ঈদের নামাজ আদায় করনেন।

এছাড়াও ডেঙ্গারবন্দ,, ইছারপার, রাধামাধবপুর, ছলামনা, নাগ্রা, মানিকবন্দ, ঝেরঝেরি, উত্তর ঝেরঝেরি, বাজারিছড়া, কালাছড়া, চন্দ্রপুর, লোয়াইরপোয়া, বৈঠাখাল, কাঁঠালতলি, জালালনগর, লক্ষ্মীপুর, হাটখলা, চাঁন্দখিরা, ডেফলআলা, জুড়বাড়ি, কাবাড়িবন্দ, করমপুর, ডেউবাড়ি ও কাসেরগাঁওয়ের মসজিদ সহ ইদগাহগুলোয় যথাসময়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ।নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বশান্তি, সাম্য ও মানবকল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত। পরে কুরবানির ধর্মীয় তাৎপর্য ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন ইসলামিক চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। ঈদের মূল বার্তা হিসেবে উঠে আসে—আত্মোৎসর্গ, মানবপ্রেম ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান।পরে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন সকলে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার উষ্ণতা। ছোটদের আনন্দে, বড়দের আপ্যায়নে মুখর হয়ে ওঠে ঘরবাড়ি।

প্রতিটি ইদগাহের পাশে বসে যায় ঈদের ছোটখাটো মেলা। গ্রামীণ কুটির শিল্প, ফাস্টফুড, খেলনা ও কসমেটিক্সের দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দুপুর পর্যন্ত চলা এসব মেলাগুলোতে মানুষের মিলন ঘটায় এক অপার আনন্দঘন আবহে।উৎসবকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে প্রশাসনও ছিল তৎপর। পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও গ্রাম্যপ্রহরীরা দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে ধর্মীয় মর্যাদা ও সামাজিক ঐক্যের অপূর্ব নজির স্থাপন করল এবারের পাথারকান্দির ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন। প্রতিকূল সময়েও মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এই আয়োজন নিঃসন্দেহে এলাকাবাসীর আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও একতা তুলে ধরে।