সাত্ত্বিকতার ও বাঙালি ঐতিহ্য নিয়ে বারইগ্রাম আশ্রমে দুর্গা পূজা উদযাপন
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৪ অক্টোবর : রাধারমণ আশ্রমে পুজোয় ভক্তের ঢল শ্রীভূমি জেলার বারইগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী গোপাল জিউ শ্রীশ্রী রাধাবিনোদ জিউ ও শ্রীশ্রী রাধারমন গোস্বামী জিউর আশ্রমে বিগত বছর থেকে অত্যন্ত সাত্ত্বিকতার সহিত মা দুর্গার পূজা চলে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মহা ধুমধামে আনন্দময়ীর পূজা অনুষ্টককত হয় আশ্রমে। বরাক উপত্যকার বিভিন্ন শহরের ভক্তরা শহুরি চাকচিক্য ছেড়ে আশ্রমের পূজার আনন্দে শামিল হতে বারইগ্রামে ছুটে আসেন। এবার পুজোর শুরুতেই সপ্তমীতে
আশ্রমে শিশু কিশোর দের নিয়ে পূজার আনন্দের সঙ্গে “এসো দুর্গা আঁকি ” এতে নিজেদের মত করে মায়ের নানা রূপ তুলে ধরে বাচ্চারা। তাদের তুলিতে আঁকা ছবির সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অষ্টমীতে মহিলাদের অনুষ্ঠান আল্পনা, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি বিশেষ আকর্ষন এতে জেলার নানা প্রান্ত থেকে মহিলারা অংশ গ্রহণ করেন বিজয়দের শাড়ি উপহার তুলে দেওয়া হয়। একইদিন শিশু কিশোর কিশোরিদের নিয়ে আরতি প্রতিযোগিতায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার দেখা যায়। বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
অঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে প্রথম ভৈবব দে, দ্বিতীয় শ্রদ্ধা দাস, তৃতীয় দিয়া পাল। খ বিভাগে প্রথম ঋতুজা দাস, দ্বিতীয় মনালি দে, তৃতীয় শুভম পাল। আরতি প্রতিযোগিতায় প্রথম শ্রদ্ধা দাস ও স্নেয়া দাস।
দ্বিতীয় আদ্রিজা দাস, ও রিম্পি দেব নাথ। তৃতীয় অঙ্কিতা দাস ও সায়নিক দে। উলুধ্বনি প্রথম সোমা দাস,ল দ্বিতীয় রাখি নমশূদ্র ও মিলন নমশূদ্র। তৃতীয়, দীপিকা দেবনাথ ও আলো পাল। শঙ্খধ্বনি প্রথম চন্দনা নমশূদ্র। দ্বিতীয় পিংকি সেন ভানু পাল। Expect শোভা দাস ও রাখি নমসুদ্র।বিচারকের আসনে ছিলেন সুরজিৎ সেন, সুমিতা রায় ও সন্ধ্যা কর। পুরস্কার তুলে দেন আশ্রমের গৌর গোপাল দাস বাবাজি, পুজা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস,সম্পাদক রাজদীপ দাস ও সুনয়ন দাস, রজত দে,নন্দ দুলাল দাস, রাজেশ দাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা ছিলেন রাজশ্রী রায়। নবমী তে বরাক উপত্যকার পাশাপাশি ত্রিপুরা থেকে ভক্তদের আগমন দেখা যায়।
বিজয়া দশমীতে মায়ের ভাসানের পর বৃহত্তর বারইগ্রাম এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামের ধর্মপ্রাণ লোকেরা আশীর্বাদ নিতে আশ্রম প্রাঙ্গনে সমেবত হন। আশীর্বাদ পর্ব শেষ হওয়ার পর এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক আশ্রমের পূজার অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। একি সঙ্গে ঘোষণা করা হয় আগামী বছর এই ঐতিহাসিক প্রভুপাদ শ্রীশ্রী রাধারমণ গোস্বামী জিউর নিজের হাতে গড়া এই পূজার ৭৫ বছর তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার রণকৌশল ঠিক করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
পূজা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেনঐ আশ্রমের পূজা শুধু পূজো-অর্চণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পূজোর সঙ্গে চলে বিভিন্ন সামাজিক কার্যসূচী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। পূজো উপলক্ষে এলাকার শতাধিক দরিদ্র মায়েদের নতুন কাপড় বন্টন করে রোটারী ক্লাব। পূজোয় এবার নতুন কাপড় দেওয়া হয় । আশ্রমের দুর্গোৎসব সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে উঠে সকলের সহযোগিতায় । পূজো কমিটির সভাপতি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এখানে উল্লেখ্য প্রভূপাদ শ্রী শ্রী রাধারমণ গোস্বামী জিউ নিজ হাতে শুরু করা পূজাটি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাত্ত্বিকতার চুড়ান্ত ছাপ রেখে অনুষ্ঠিত হয়।প্রতি দিনই দুপুরে সেখানে মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
আগামী বছর ৭৫ বছর উপলক্ষে দশ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান পূজা কমিটির সম্পাদক সুনয়ন দাস । তিনি বলেন পূজাকে ঘিরে এখন থেকে আমাদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে।
অপর সম্পাদক রাজদীপ দাস বলেন, ৭৫ বছরের সূচনা যাত্রা শুরু তবে এই ৭৫ কে স্মরণী করে রাখতে এখন থেকে পরিকল্পনা শুরু তবে ছয়মাস আগে থেকে অর্থাৎ
বৈশাখ মাসে বিশেষ সভা আহ্বান করা হবে । এই সভায়
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।