ড. আবুল হাসান চৌধুরীর গ্রন্থ “সমীক্ষণ” উন্মোচিত
বই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুগসূত্রের সৃষ্টি করে : মুজিবুর____
ইকবাল লস্কর, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৮ অক্টোবর : উন্মোচিত হল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ নিবন্ধক ড. আবুল হাসান চৌধুরী লিখিত তৃতীয় বই “সমীক্ষণ”। বরাক এডুকেশন সোসাইটির করিমগঞ্জ জেলা ফোরামের উদ্যোগে ভাঙ্গার সরপুরস্থিত নেকটার সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উন্মোচন করেন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের অধ্যাপক অশোককুমার সেন। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক তথা বরাক এডুকেশন সোসাইটির করিমগঞ্জ ফোরামের সভাপতি ড. মুজিবুর রহমান (মুজিব স্বদেশী) চৌধুরীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ড. আবুল হাসান চৌধুরীর গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করে অধ্যাপক অশোক কুমার সেন বলেন, ড. চৌধুরীবাবু আদ্যপান্ত একজন সামাজিক মানুষ। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে তাঁর পড়াশুনা হলেও সমাজের সবক্ষেত্রে তাঁর পান্ডিত্য অপরিসীম এবং চিন্তাধারা গভীর ও উন্নতমানের। আর এই চিন্তাধারার নিঃসৃত লেখনীও গভীর উন্নতমানের এবং সামাজের কল্যাণে নিহিত।
তিনি বলেন, আজকাল নব প্রজন্ম বই পড়া থেকে ক্রমে সরে পড়ছে। যা সমাজের ক্ষেত্রে অশনি সংকেত। এর থেকে উত্তোরণে ড. আবুল হাসান চৌধুরীর মত ব্যক্তিত্ব নতুন দিশা দেখাতে পারেন। তার লেখনি নব প্রজন্মকে আকৃষ্ট করবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক সেন। সভায় নিজের প্রতিক্রিয়ায়, বরাক এডুকেশন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংযোজক তথা বইয়ের লেখক আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, স্বপ্ন ছিল বইয়ের লেখক হবেন, জগৎ জুড়ে এই পরিচিতি লাভ করবেন। কিন্তু এতো ব্যস্ত কর্মজীবনের এই প্রান্তে এসে সেটা যে এমনি সাকার হয়ে যাবে সে কখনো ভাবতে পারেননি। বিশেষ করে তাঁর প্রথম গবেষণা বই “দ্যা সায়েন্টিফিক আইডিয়াজ ইন দ্য কোরান” অন্তর্জালে (অ্যামাজনে) প্রকাশিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সামাজিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, রীতিনীতি তাঁকে অহরহ তাড়ায়। আর এই তাড়না থেকেই লেখার খোরাক জন্মায়। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে লেখার জন্য তাঁর পরিবারের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। পারিবারিক সমস্ত দায়িত্ব সহধর্মীনি সামলে নিয়েছেন তিনি এই কাজে এগোতে পেরেছেন। পাশাপাশি সহকর্মী ও অন্যান্যদের সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রসঙ্গত আবুল হাসান চৌধুরীর দ্বিতীয় গ্রন্থ হচ্ছে “ইসলামি দর্শন: শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি” অনুষ্ঠানে গ্রন্থের বিশ্লেষণ যুতসই উপস্থাপন করেন কাটলিছড়ার পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় মডেল কলেজের অধ্যাপক নজমুল হোসেন লস্কর। বহুত্বের সংমিশ্রণে সমীক্ষণ বইটি এক সুখপাঠ্য হিসেবে পরিগণিত বলে উল্লেখ করে বইটি সবাইকে পড়তে আহ্বান জানান।
সভার সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বই মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয় এবং এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি যুগসূত্রের সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজি নজরুল ইসলামকে আমরা দেখিনি। কিন্তু তাদের সৃষ্টি বইয়ের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের কাছে অতি পরিচিত। এভাবে বিশ্বের বিশিষ্ট লেখকরা আমাদের কাছে পরিচিত। আমাদের উত্তরসুরীরাও এভাবে একই পরিচয় বহন করে যাবেন। তিনি বইকে আপন হিসেবে বেছে নিতে উপস্থিত পড়ুয়াদের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন এসসি দে কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বিক্রম চক্রবর্তী, বরাক এডুকেশন সোসাইটির সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সচিব লালমিয়া লস্কর, নবীনচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন খাদেম, ভাঙ্গা এইচএস স্কুলের শিক্ষক এমাদুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট ছড়াকার ও সাংবাদিক মাহতাবুর রহমান, সেন্ট অ্যান্টোনি স্কুলের শিক্ষক তথা সোসাইটির করিমগঞ্জ শাখার সদস্য এরশাদ উদ্দিন তাপাদার, আইনজীবী দেওয়ান সেলিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ড০ বাহারুল ইসলাম লস্কর, সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সচিব তথা ক্রীড়া সাংবাদিক ইকবাল বাহার লস্কর সহ অন্যান্যরা।
রবিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষক তথা সোসাইটির করিমগঞ্জ ফোরামের সচিব তৈয়ীবুর রহমান। গোটা অনুষ্ঠানও এদিন সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন তিনি। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য পেশ করেন ব্যবস্থাপক নেকটার সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক আকমল মাহমুদ।