বন্যা ও জমা জলের সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চের
বরাক তরঙ্গ, ১৩ মার্চ : বর্ষা আসন্ন। প্রতি বছরের মত এবারও জল-আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন শিলচর শহর ও শহরতলির মানুষ। শহরের বিভিন্ন দিকে পাকা ড্রেন নির্মাণ চলছে এলোপাথারি। চলছে অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তা উঁচু করার কাজ। অথচ এ গুলোর কোনওটিই বর্ষার আগে সঠিক অর্থে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। এই অবস্থায় বন্যা এবং জমা জলের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে অতি দ্রুত কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়েছে প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ। গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ চার মাস ধরে বৃহত্তর শিলচর শহরের বাঁধ, স্লুইস গেট, প্রাকৃতিক খাল, রোড সাইড ড্রেন ইত্যাদি অনুসন্ধান করে এক বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হয়। সমস্যা গুলোকে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে কী ভাবে সে গুলো সমাধান করা যায়, সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।

বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্টের কপি নিয়ে মঞ্চের প্রতিনিধিরা দেখা করেন পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, জল সম্পদ বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ও অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং জেলা আয়ুক্তের সাথে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মঞ্চের সভাপতি ধ্রুবকুমার সাহা, সম্পাদক বাসুদেব শর্মা, অধ্যাপক অজয় রায়, সাধন পুরকায়স্থ, সঞ্জীব রায়, প্রণব দত্ত, অভিজিত দাম, আজমল হুসেন চৌধুরী ও আশু পাল। সরকারি আধিকারিকেরা বিস্তারিত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। মঞ্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, স্লুইস গেটের ব্যাপারে জল সম্পদ বিভাগের নিজস্ব রিপোর্টে এমন অনেক গুলো স্লুইস গেটকে শুধু নতুন রঙ করে কার্যক্ষম দেখানো হয়েছে, যেগুলো বাস্তবে মোটেই কাজ করছে না। কয়েকটি স্লুইস গেটের উল্লেখই নেই সরকারি খাতায়। বাঁধগুলির উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মাটি ফেলা হচ্ছে, কিন্তু পাশে রিটেনশন ওয়াল তৈরি না করায় সেগুলি এক বর্ষায়ই বৃষ্টির জলে ধুয়ে নেমে গিয়ে বাঁধের উচ্চতা আবার যে কে সেই হয়ে যাবে। পাশাপাশি, রোড সাইড পাকা ড্রেন গুলোতে কোনও গ্রেডিয়েন্ট নেই, দীর্ঘদিন থেকে পরিস্কার না করায় আবর্জনা এবং মাটি জমে সেগুলোর জল বহন ক্ষমতা প্রায় নেই। প্রাকৃতিক খাল গুলো আবর্জনা ও জবর দখলের চাপে জল টানার যোগ্যতা হারিয়েছে। খালের পাশের জবর দখলীকৃত জমি মুক্ত করার কোনও উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ড্রেনেজ সিস্টেমকে উন্নত রাখার দায়িত্বে যে যে সরকারি বিভাগ গুলি রয়েছে, তাদের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। ফলে এই দফতর ওই দফতরের ঘাড়ে দায় ঠেলে দিয়ে নিজেদের অভিযোগমুক্ত করার প্রয়াস পাচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সমন্বয় সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলো থেকে অফিসার প্রতিনিধি নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠনের জন্য জেলা আয়ুক্তকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নদীর পাড় এবং ভাঙা বাঁধের সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, তারাপুর শিব বাড়ি এলাকা ও রংপুর আঙ্গারজুর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বেরেঙ্গা নাথপাড়ায় গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাঙ্গিরখালে প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ এতোটাই ধীর গতিতে এগোচ্ছে যে, আগামী দশ বছরেও তা সম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব হবেনা। তাছাড়া ওয়াল নির্মাণের নামে খালের প্রস্থের এক বড় অংশই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জবর দখল হয়ে বাড়ি কিংবা দোকান নির্মিত হয়ে যাবে। মেশিন দিয়ে নিয়মিত খাল পরিস্কার করার সম্ভাবনাই নির্মূল হয়ে যাবে। রাঙ্গিরখাল, সিঙ্গির খাল, লঙ্গাই খাল, বাছাই খাল, বোয়ালজুর খাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশের খাল গত ৪০/৫০ বছরের মধ্যে পরিস্কার করা না হওয়ায় এবং দুই পাড়ে জবর দখল হওয়ায় তাদের নাব্যতা হারিয়েছে। সোনাই রোডের উচ্চতা খুব অবৈজ্ঞানিক ভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অথচ সড়কের দুইধারের জল বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট প্যাসেজ ও পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে না। ফলে কনকপুর, শরৎপল্লী, লিংক রোড, নিউ শিলচর, ন্যাশনেল হাইওয়ে সহ বিস্তৃত অঞ্চলে এবার জমা জলের ভয়ানক সমস্যা দেখা দেবে বলেও প্রতিনিধিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মঞ্চের প্রতিনিধিরা সকল সরকারি আধিকারিকের কাছে দৃঢ়ভাবে দাবি জানিয়েছেন যে, আগামী বর্ষায় বন্যা এবং জমা জলের সমস্যা থেকে শহর ও শহরতলীকে বাঁচাতে, আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তারা যেন প্রয়োজনীয় কাজ আরম্ভ করেন। প্রশাসন চাইলে, সমন্বয় মঞ্চের তরফে সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত আছেন বলেও তারা স্পষ্টীকরণ দেন।