জ্বালানি কাঠ সংগ্রহে বিদ্যুৎ ছোবলে মৃত্যু প্রৌঢ়ের, প্রতিবাদে উত্তাল ছড়ারপার
দফায় দফায় জাতীয় সড়ক অবরোধ, ছুটে যান সুজাম, প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ মুক্ত
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ২০ জুন : ১১ কেভির হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সংস্পর্শে করুণ মৃত্যু হল আলা উদ্দিন বড়ভূইয়া নামের এক প্রৌঢ়ের। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে কাটলিছড়ার মোহাম্মদপুর গ্রামের ছড়ারপাড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি সংঘটিত হয়। জানা গেছে, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিচুভাবে ঝুলে থাকা ১১ কেভির লাইনের সঙ্গে সংস্পর্শ ঘটতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আলা উদ্দিন (৪৮)। এ খবর পেয়ে বরাক ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্টের সভাপতি আব্দুল আহাদ লস্কর, রাইজর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর তাদের সমর্থক ও এলাকাবাসী নিয়ে দফায় দফায় আন্দোলন শুরু করেন। তারা ৬ নং ধলেশ্বর-ভৈরবী জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ বিভাগের নামে মুর্দাবাদ ধ্বনি দিতে থাকেন। দীর্ঘদিন থেকে ১১কেভির এই বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন বিপদজনক অবস্থায় ঝুলে থাকলে লালা এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষকে বারবার দাবি জানানো হলে কোন বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আজ এক তরতাজা যুবকের প্রাণ চলে গেল। আন্দোলনকারীরা বিভাগীয় এসডিওর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করে তাদের গাফিলতিতে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে।
খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান লালা থানার ওসি পল লালহলিমসং এবং লালার ইনচার্জ সার্কল অফিসার লাইশ্রিংডি নাইডিং। তাঁরা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে অবরোধকারীদের মুক্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পোঁড়খাওয়া এই আন্দোলন কারীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ সহ পরিবারের একজনকে চাকরি দেবার দাবি উত্থাপন করেন। ইনচার্জ সার্কল অফিসার লাইশ্রিংডি নাইডু জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেবার পর জাতীয় সড়ক অবরোধ মুক্ত করা হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর মোহম্মদপুর দ্বিতীয় খণ্ডের ছড়ারপার গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে । আলা উদ্দিন বড়ভূইয়া নিজের বাড়ির কাছে সকাল ৯ টা নাগাদ বৃষ্টির জলে প্লাবিত অঞ্চল থেকে জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাই ভল্টেজ বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। তারা এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি উত্থাপন করে ৬নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ শুরু করেন। স্থানীয় জনগণের সাথে প্রতিবাদে যোগ দেন রাইজর দলের নেতা জহির উদ্দিন লস্কর, বিডিএসএফের সভাপতি আহাদ লস্কর। প্রতিবাদীদের উপস্থিতিতে অবরোধ আরও প্রবল হয়ে ওঠে। রাইজর দলের নেতা জহির উদ্দিন লস্কর এবং আহাদ লস্কর মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারি তহবিল থেকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার দাবি উত্থাপন করেন।
সার্কল অফিসার অবরোধকারীদের সম্পূর্ণ দাবি পূরণ করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করলে আন্দোলন কারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। পৌঁছেন কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর। তিনি মৃত আলা উদ্দিনের পরিবারকে সরকারি সাহায্য পাইয়ে দিতে সব ধরণের সহযোগিতা আশ্বাস প্রদান করেন এবং ব্যক্তিগত ভাবে কিছু অর্থরাশি দিয়ে সাহায্য করেন।
এদিকে, প্রয়াত আলাউদ্দিন বড়ভূইয়া, স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রেখে গেছেন। ছেলেরা বহির্রাজ্যে কর্মরত। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেয়ে দুই ছেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে। শোকস্তব্ধ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন রাইজর দলের নেতা জহির উদ্দিন, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির ফরিদ উদ্দিন লস্কর, কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন, এআইইউডিএফএর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন বড়ভূইয়া, বিডিএসএফ সভাপতি আব্দুল আহাদ লস্কর প্রমুখ।