জেলার নাম পরিবর্তন, ৬ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট সফল করার আহ্বান প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির
বরাক তরঙ্গ, ২ সেপ্টেম্বর : অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিকভাবে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যমণ্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ নাগরিক কমিটি আহূত ৬ সেপ্টেম্বরের করিমগঞ্জ জেলায় সাধারণ ধর্মঘট সর্বাত্মকভাবে সফল করতে করিমগঞ্জবাসী নাগরিকদের প্রতি আবেদন জানিয়ে কমিটির পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক সুনীত রঞ্জন দত্ত, রজত চক্রবর্তী,অরুণাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ্তা দে চৌধুরী এবং কার্যকরী সদস্য জ্যোতিষ পুরকায়স্থ। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রজত চক্রবর্তী, জ্যোতিষ পুরকায়স্থ এবং অরুণাংশু ভট্টাচার্য। বক্তারা বলেন, যে আমরা আগামী ৬ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জ জেলাব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটকে সফল করতে জেলার প্রতিটি অঞ্চলে জোরদার প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রচারে গ্রাম শহরে ব্যপক সাড়া পড়েছে এবং জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে এই সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে এগিয়ে এসেছেন। আন্দোলনের তীব্রতা মুখ্যমন্ত্রীর পাথারকান্দি সফরে পরিলক্ষিত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে বারবার নাম পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তাঁর কাছে প্রশ্ন আকারে উত্থাপন করা হয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে ইতিহাস বিকৃত করে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে শ্রীভূমি করেছেন তিনি নন। এই বক্তব্যের যে কোন সত্যতা নেই, তা কারও অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এবিষয়ে অবহিত না হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার অর্থই হচ্ছে কার্যতঃ মহান এই মনীষীকে অপমান করা। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয় যে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে এতে করিমগঞ্জ জেলার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বুদ্ধিজীবী ও সচেতন নাগরিকেরা যুক্ত হয়ে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেছেন। ফলে তিনি বরাক উপত্যকার নাগরিকদের ‘করিমওয়ালা’ বলে অপমানিত করেছেন। আমরা তার এধরনের অবিবেচক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
এই অগণতান্ত্রিক এবং অন্যায় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে করিমগঞ্জ জেলায় গড়ে উঠা স্বাধীনতা আন্দোলন, মাতৃভাষা আন্দোলন সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ, বিপিন চন্দ্র পালের স্মৃতিধন্য করিমগঞ্জ শহর তথা জেলার ভূমিকাকে নস্যাৎ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে জনমনে গ্রহণযোগ্য করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার একটি পংক্তিকে বিকৃত করে তার অসাম্প্রদায়িক ও উদার মনোভাবকে আড়াল করা হয়েছে অথচ তাঁর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা ও দাবি আদায়ের ভূমিকা সর্বজনবিদিত।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জনগণকে বাধ্য হয়ে নথিপত্র পরিবর্তন করতে গিয়ে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং অভাবনীয় হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে। একথা ভুললে চলবে না যে স্বাধীনতার পর থেকেই উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসনের বারবার শিকার হয়েছেন বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষ। ১৯৬১, ১৯৭২ এবং ১৯৮৬ সালে মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা সহ করিমগঞ্জ জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র কমিয়ে দেওয়া, সিইউইটি পরীক্ষা কেন্দ্র বরাক উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ করিমগঞ্জ জেলায় স্থাপন না করা, চাকুরি প্রদানে প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন করে বরাক উপত্যকার ছাত্রছাত্রীদের বঞ্চিত করা এবং রাস্তাঘাট, রেল পরিষেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত অবহেলা করা হচ্ছে।
তাই এই সীমাহীন বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে যাতে না উঠে তাই বিভাজনের রাজনীতি চরিতার্থ করতে জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা হয়েছে।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) নাগরিক কমিটি করিমগঞ্জ জেলায় সাধারণ ধর্মঘটের যে আহ্বান জানিয়েছে তা সর্বাত্মকভাবে সফল করতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, দোকান পাট, হাট বাজার, এবং যানবাহন বন্ধ রেখে সাধারণ ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করার আহ্বান জানায় কমিটি।