এরালিগুলের দীনদয়াল মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপ্তি দিবস উদযাপন
জনসংযোগ, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৪ মার্চ : শ্রীভূমি জেলার এরালিগুলস্থিত পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে সোমবার পঞ্চম স্নাতক সমাপ্তি দিবস (Graduation Finishing Day) অত্যন্ত উৎসাহ সাথে উদযাপিত হয়েছে। একইসঙ্গে আয়োজিত হয় মাতৃ বন্দনা (Matri Bandana) এবং শ্রমের সম্মান (Shram Ka Sanman) কর্মসূচি, যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মায়েদের সম্মানিত করা হয় এবং সমাজের শ্রমজীবী মানুষের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পয়লাপুলের নেহরু কলেজের অধ্যক্ষ ড. শুভজিৎ চক্রবর্তী এবং কাছাড় কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সামসুদ্দিন। মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা ড. জয়শ্রী চক্রবর্তী প্রদীপ প্রজ্বলনের এবং অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে মহাবিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন এবং ন্যাক (NAAC)-এর প্রথম পর্যায়ের মূল্যায়নে বি প্লাস গ্রেড অর্জনের জন্য আনন্দ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন ‘শিক্ষার মূল লক্ষ্য কেবল ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং সত্যিকারের মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা। পাশাপাশি, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের “অখণ্ড মানবতাবাদ” দর্শনকে শিক্ষার্থীদের আত্মস্থ করার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি ড. শুভজিৎ চক্রবর্তী তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত ভারত গ্রামীণ সমাজের মধ্যে নিহিত। তাই শিক্ষিত যুবসমাজের উচিত জাতি, ধর্ম, বর্ণভেদ ভুলে সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা। বিশেষ অতিথি মোঃ সামসুদ্দিন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা শুধু ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানবিক ও দায়িত্ববান বিশ্বনাগরিক করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শিক্ষার্থীদের পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদান।

এ বছর তিনটি বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হয় অশোক চক্রবর্তী মেমোরিয়াল পুরস্কার, জিতেন্দ্র নাথ মেমোরিয়াল পুরস্কার এবং প্রতিষ্ঠান মেধা বৃত্তি। পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র বিনীত দত্ত বিএসসি চূড়ান্ত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করে অশোক চক্রবর্তী মেমোরিয়াল পুরস্কার ও জিতেন্দ্র নাথ মেমোরিয়াল পুরস্কার লাভ করে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করায় রুহেল আহমেদ-কে অশোক চক্রবর্তী মেমোরিয়াল পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও সাবিহা ফেরদৌসি, তানিয়ার হুসেন খান, সুমন সিনহা, দীপরাজ চন্দ, মাসুদা ইয়াসমিন, এবং রুহুল ইসলাম-কে প্রতিষ্ঠান মেধা বৃত্তি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মাতৃ বন্দনা ও শ্রমের সম্মান। যেখানে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের বিশেষ সম্মান জানানো হয়। এ বছর ফারহানা বেগম, খসরুন নেসা, অরতি নাথ, রহেনা বেগম, সঞ্চিতা চৌধুরী সিনহা, শিপ্রা রানি দাস ও লাভলী দত্ত-কে সংবর্ধিত করা হয়। অন্যদিকে শ্রমকে সম্মান জানিয়ে মিড-ডে মিল কর্মীদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে মমতা বেগম, মণি দে ও বিনা দে-কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটির সমন্বয় করেন ড. ফকরুল ইসলাম লস্কর, ইতিহাস বিভাগের প্রধান এবং পুরো কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন ড. ডেইজি ভট্টাচার্য, সমাজবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। মহাবিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সতীনাথ পাল ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে দিনটির সফল সমাপ্তি ঘটে।