কার্ল মার্ক্সের প্রয়াণ দিবস পালন এসইউসিআই-র
বরাক তরঙ্গ, ১৪ মার্চ : বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের উদ্গাতা, প্রখ্যাত দার্শনিক, সমাজ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী এবং সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম কার্ল মার্ক্সের প্রয়াণ দিবস আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় শিলচরেও এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের কাছাড় জেলা কমিটির পক্ষ থেকে পালন করা হয়। দলের উকিলপট্টিস্থিত জেলা কার্যালয়ে এ উপলক্ষে শুক্রবার পতাকা উত্তোলন করেন দলের জেলা সম্পাদক ভবতোষ চক্রবর্তী। জেলা কার্যালয়ে কার্ল মার্ক্সের প্রতিকৃতি স্থাপন করে মাল্যদান করেন ভবতোষ চক্রবর্তী, দুলালী গাঙ্গুলি সহ জেলা কমিটির সদস্য সদস্যা সহ অন্যান্য সদস্যরা। মাল্যদান পর্বের পর উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের সামনে মার্ক্সের জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন ভবতোষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি সংক্রান্ত মার্ক্সের তত্ত্ব সমূহ মার্ক্সবাদ নামে পরিচিত। মার্ক্স বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণি সংগ্ৰামের ইতিহাস। শ্রেণি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে মানব সমাজগুলো বিকশিত হচ্ছে। তিনি বলেন মার্ক্স দেখিয়েছেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রেণী সংগ্রামের প্রকাশ ঘটে শাসক শ্রেণি যারা একইসাথে রাষ্ট্র ও কলকারখানা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শ্রমজীবী শ্রেণি যাদের জীবিকার একমাত্র উপায় পুঁজিপতির কারখানায় ন্যূনতম মজুরির বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করা তাদের মাঝে দন্দের মধ্য দিয়ে। মার্ক্স দেখিয়েছেন যে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে শ্রমিক শ্রেণি যে পরিমাণ নতুন মূল্যের সৃষ্টি করে তার ভগ্নাংশই মাত্র তারা মজুরি বাবদ পান, উদ্বৃত্ত সিংহভাগ অংশ পুঁজির মালিকগণ আত্মসাৎ করে ফেলে।
দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুসরণ করে মার্ক্স দেখিয়েছেন যে পূর্বতন সমাজব্যবস্থা গুলোর মতো পুঁজিবাদও তার অন্তঃস্থ বিভেদ ও শ্রেণি সংগ্রামের দরুন ভেঙে পড়বে এবং সমাজতন্ত্রের জন্ম হবে। মার্ক্সবাদী দর্শন বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে অস্থিতিশীল ও সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ক্রমাগত শ্রেণি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে শ্রেণিচেতনার জন্ম হবে; যার ফলে তাদের মাঝে ঐক্য গড়ে উঠবে এবং এই ঐক্যবদ্ধ শ্রমজীবী শ্রেণি শাসক শ্রেণিকে ক্ষমতাচ্যুত করে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, রাশিয়া, চিন সহ অন্যান্য দেশে বিপ্লবের আঘাতে শ্রমিক শ্রেণী ক্ষমতা দখল করেছিল কিন্তু মার্ক্সবাদের সঠিক প্রয়োগ না ঘটানোর ফলে সেগুলোতে প্রতিবিপ্লব ঘটে যায়। কিন্তু ভারতের শ্রমজীবী জনগণ এযুগের অন্যতম মার্ক্সবাদী দার্শনিক শিবদাস ঘোষের চেতনাকে পাথেও করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আঘাতে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক শোষণ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার সংকল্প নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে মার্ক্সবাদের সঠিক অধ্যয়ন করার আহ্বান জানান।