ভেসে গিয়েছে সেতু, রাস্তায় হাতির ভয়, নদী পেরিয়ে গভীর রাতে অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন বিএমওএইচ ডাঃ মোল্লা

৮ অক্টোবর : গ্রামে ঢোকার একমাত্র রাস্তা গাঠিয়া নদীর ওপর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড। প্রবল বর্ষণের কারণে ভয়ঙ্কর প্লাবনে ভেসে গিয়েছে সেতুটি। নদী পার হতে ভরসা একমাত্র প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা বোট। সমস্যার শেষ এখানেই নয়। গ্রামটি আবার জঙ্গলে ঘেরা। রাস্তাতে হাতি দাঁড়িয়ে থাকা নিত্য দিনের ঘটনা। এদিকে এক অন্তঃসত্ত্বার প্রসব যন্ত্রণার খবর এসে পৌঁছয় ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। এরপরেই শুরু হয় ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক-কর্মীদের তৎপরতা।

জানা গিয়েছে, বিএমওএইচ ডাঃ মোল্লা ইরফান হোসেনের নের্তৃত্বে স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি টিম আর কোনও কিছুর পরোয়া করেনি। বোটে নদী পেরিয়ে তাঁরা পায়ে হেঁটে পাড়ি দেন গ্রামের প্রায় অর্ধেক পথ। অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বার বাড়ির লোকেরাও মহিলাকে তাঁর বাড়ি থেকে বাকী পথ গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে আসেন একটি কালভার্ট পর্যন্ত যেটি ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে মহিলাকে স্ট্রেচারে করে নদী পর্যন্ত নিয়ে আসেন বিএমওএইচ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। এরপর বোটে চাপিয়ে নদী পার করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সোজা নিয়ে যাওয়া হয়  সুলকাপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।

ভেসে গিয়েছে সেতু, রাস্তায় হাতির ভয়, নদী পেরিয়ে গভীর রাতে অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন বিএমওএইচ ডাঃ মোল্লা

বর্তমানে ওই হবু মা প্রসবের অপেক্ষায়। রোমহর্ষক ঘটনাটি সোমবার গভীর রাতের নাগরাকাটার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন খেরকাটা গ্রামের। বিএমওএইচ অবশ্য তাঁদের এই তৎপরতাকে মহান কোন কিছু বলে ভাবতে নারাজ। তিনি বলেন, “এটা আমাদের কর্তব্য্। তাছাড়া এখন এলাকায় দুর্যোগ চলছে। আশা করছি দ্রুত ওই অন্তঃসত্ত্বা সুস্থ শিশুর জন্ম দেবেন। প্রতিমুহুর্তে খোঁজ খবর রেখে চলা হচ্ছে।”

খেরকাটার ২০ বছরের যে অন্তঃসত্ত্বাকে নিশুতি রাতে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁর নাম শিলা খারিয়া। তাঁর স্বামী তুহিন খারিয়া পেশায় দিনমজুর। স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে প্রসব যন্ত্রণার খবর আসা মাত্রই বিএমওএইচ সহ আরও এক চিকিৎসক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু সরকার, আশা প্রকল্পের ব্লক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটার মুন্না হক ও অ্যাম্বুল্যান্স চালক আশরাফুল সরকার ওই গ্রামে চলে যান। ভাঙা সেতু কিংবা কালভার্টের সমস্যা তো ছিলই। সেসময়ই খেরকাটার জঙ্গলে বেশ কয়েকটি হাতিও ছিল। বোটে করে নদী পার হওয়ার পর ঘুটঘুটে অন্ধকারে মোবাইলের আলো জ্বেলে শুরু হয় তাঁদের পথ চলা। যদি রাস্তাতেই প্রসব হত সেজন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেসবের আর অবশ্য প্রয়োজন পড়েনি।

নাগরাকাটা প্লাবন বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিএমওএইচ এর এই ধরনের দুঃসাহসিক কাজ অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ৪ অক্টোবর রাতে বিপর্যস্ত বামনডাঙ্গা চা বাগানে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এনডিআরএফের তৈরি করে দেওয়া জিপ লাইনে ঝুলে তিনি সেখানে ঢুকেছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিএমওএইচ এর নদী খাদ পার হওয়ার সেই ভিডিও বর্তমানে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ভাইরাল। ওই স্বাস্থ্য কর্তা বলছেন, ‘মানুষের বিপদে মানুষই যদি পাশে না দাঁড়ায় তবে কে দাঁড়াবে’।

Spread the News
error: Content is protected !!