ভূতের আতঙ্ক নাকি মানসিক ব্যাধি? রহস্যে ঘেরা বিলবাড়ি শ্রীকৃষ্ণ রাম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২৩ আগস্ট : শ্রীভূমি জেলার পাথারকান্দির একটি নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—বিলবাড়ি শ্রীকৃষ্ণ রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। বহু বছর ধরে এলাকার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসা এই বিদ্যালয় হঠাৎ করেই এখন আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এই স্কুল। কারণ, বিদ্যালয়টির নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এক অস্বাভাবিক ঘটনা। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে হঠাৎ করেই একাধিক ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, অনেকে চিৎকার করছে, আবার অনেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে।
প্রতিদিন ১১/১২ টা বাজলেই অচেতন ছাত্রী! আতঙ্কে স্কুলের ছাত্রছাত্রী অবিভাবক শিক্ষা সহ এলাকাবাসী
ঘটনা একদিন বা দু’দিনের নয়। কয়েক মাস ধরেই একই সময়ে প্রতিদিন এই অস্বাভাবিক দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বিদ্যালয়ে যখন ক্লাস চলছে, ঠিক তখনই একে একে ছাত্রীদের লুটিয়ে পড়তে দেখে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সহপাঠী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে। অভিভাবকদের খবর দেওয়া মাত্রই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু হয় হুলুস্থুল। কেউ ছাত্রীদের হাসপাতালে নিয়ে ছুটছেন, আবার কেউ নিয়ে যাচ্ছেন ওঝা-মৌলভির কাছে, মনে করছেন এ কোনো অশুভ আত্মার কাণ্ডকারখানা।
তাদের মতে, অতিরিক্ত গরম, মানসিক চাপ কিংবা অপুষ্টির কারণে ছাত্রীদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই বিদ্যালয়ে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প বসিয়ে ছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হতে পারে ম্যাস হিস্টেরিয়া বা গণ-মানসিক ব্যাধি। যেখানে এক বা একাধিক কিশোরীর মধ্যে মানসিক চাপ, ভয় এবং গুজব একসঙ্গে প্রভাব ফেলতে শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে তা গোটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, ছাত্রীদের মধ্যে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। কিন্তু অভিভাবক মহলের একাংশ এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাদের বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক যুক্তির আড়ালে সত্যিকারের কোনো অশুভ শক্তি কাজ করছে। কারণ, যদি শুধুই স্বাস্থ্য সমস্যা হতো, তবে কেন প্রতিদিন একই সময়ে একই শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যেই ঘটছে এই অস্বাভাবিক ঘটনা? এখন গোটা এলাকাজুড়ে প্রশ্ন—এটি কি ভূতের আতঙ্ক, নাকি নিছক স্বাস্থ্য ও মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ? সত্যিই কি কোনো অশরীরী শক্তি বিদ্যালয়ে ঘোরাফেরা করছে, নাকি সবটাই কল্পনা ও আতঙ্কের খেলা?