বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি! বাঙালিদের এই অপমান মেনে নেবে না বিডিএফ
বরাক তরঙ্গ, ১৬ জুলাই : সম্প্রতি এবিআমসু নেতা মইনুদ্দিন আলির এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন যে আগামী সেন্সাসে যদি তাঁরা মাতৃভাষা বাংলা লেখান তবে তাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা এবং গ্রেফতার করা সহজ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এবার সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
সাংবাদিক বৈঠক করে এই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, রাজ্যে বাংলাদেশি শনাক্তকরণের জন্য ১৬০০ কোটি টাকা ব্যায় করে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বিজেপি সরকার। এই টাকা বিজেপি দল দেয়নি, এর প্রতিটি টাকা দেশের জনগণের কষ্টার্জিত আয় থেকে সংগৃহীত। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় যে উনিশ লক্ষ বাদ গেছেন, তাঁদের বিবাদ, নিষ্পত্তি না করে ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রক্রিয়াকে ঝুলিয়ে রেখে যেভাবে তামাদি করা হয়েছে, তাঁতে এটা স্পষ্ট যে রাজ্য সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়না। এবং সেজন্যই ভোট আসলেই রাজ্যে এই বাংলাদেশী ইস্যুকে উসকে দেওয়া হয়। প্রদীপ দত্তরায় বলেন, যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, সরকারি তরফে এখন বলা হচ্ছে যে ১৯৭১ এর আগের নথি দেখালে তাঁদের ফের বিনামূল্যে জমি দেওয়া হবে। তারমানে বোঝা সহজ যে সরকারও তাঁদের বাংলাদেশী বলে মনে করছেন না । তিনি বলেন এন আর সির বকেয়া কাজ শেষ করলে এই ধরনের সন্দেহ বা মন্তব্যের প্রেক্ষিতই তৈরি হতনা। তাই এটা নিশ্চিত যে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ইস্যুকে ঝুলিয়ে রেখে নির্বাচনী সুবিধা আদায় করার চেষ্টা চলছে।
প্রদীপ দত্তরায় আরও বলেন, রাজ্যের বাঙালি হিন্দুরা বিজেপি দলের অন্যতম ভোট ব্যাঙ্ক। কিন্তু ঝুলি ভরে ভোট দেবার পরও এই রাজ্যের বাঙালিদের অপমান ও বঞ্চনা ছাড়া কিছুই জোটেনি। তিনি বলেন বিগত পুজোর সময় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলাভাষীদের ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলা হল, তথাকথিত জাতিয়তাবাদী নেতারা বাঙালিদের অপমান করলেন অথচ সরকারের তরফে একজনের বিরুদ্ধেও কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু অর্বাচীন, অভব্য জাতিয়তাবাদী নেতা বারবার বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেও সরাকরি তরফে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়না, উল্টে তাঁদের সরকারি তরফে স্বীকৃতি,সম্মান মেলে। তিনি বলেন, রাজ্যের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও ইদানীং রাজ্য মন্ত্রিসভায় মাত্র একজন বাঙালি মন্ত্রী ঠাঁই পেয়েছেন, এবং তারও ক্ষমতা সীমিত করে রাখা হয়েছে। বরাক থেকে যাদের সাংসদ হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তাঁদেরও ‘জি হুজুর’ করে রাখা হয়েছে। এমনই অবস্থা যে বরাকের স্থানীয় জ্বলন্ত সমস্যা তথা রাজ্যের বাঙালিদের দুঃখ দুর্দশায় তারা এতটাই নির্বিকার যে মধ্যে মধ্যে তাঁদের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান হতে হয়।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বাঙালিদের প্রতি এতটাই পক্ষপাতিত্ব যে মূলতঃ বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার দু’টি বিধানসভা আসন ইচ্ছাকৃতভাবে কর্তন করা হয়েছে। একমাত্র বাঙালি অধ্যুষিত বলেই সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আজও চূড়ান্ত অবহেলিত এই উপত্যকা। বিগত প্রায় একমাস জুড়ে বহির্ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে এই উপত্যকা। এরকম উদাহরণ ভূভারতে আর আছে কিনা সন্দেহ। তিনি বলেন, বছরের পর বছর জুড়ে বাঙালি চাকরি প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে বঞ্চনা অব্যাহত। এখানে শিল্প স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেই। জাগীরোডে মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্ক তৈরি হয়েছে, অথচ বরাকে আগে প্রস্তাবিত হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হয়নি। কাগজ কল বন্ধ হলেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এই জমিতে টাটা গোষ্ঠীর ‘সেমি কন্ডাক্টার’ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। অথচ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পাঁচগ্রাম কাগজকলের জমিতে এতদিন পরও কোন শিল্পোদ্যোগ অধরা। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য ফিরিয়ে নেওয়া সহ রাজ্যের বাঙালিদের উন্নয়নে সরকারের সদর্থক এবং আন্তরিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।