শিলচরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও নদীবাঁধের সংস্কার কেন যথোপযুক্ত হল না, জবাব চাইল বিডিএফ
বরাক তরঙ্গ, ৩ জুন : ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার জলে আক্রান্ত হয়েছিল শিলচরের ৯০ শতাংশ জনপদ, সীমাহীন ক্ষতি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল নাগরিকদের। এরপর রাঙিরখাল, লঙ্গাইখাল সহ শহরের বিভিন্ন খালের সংস্কার এবং নড়বড়ে নদীবাঁধের সংস্কারের জন্য সরকারি স্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয় এবং সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দও করা হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনবছর বাদেও এসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে, যারজন্য আবার বন্যার কবলে পড়েছেন শহরের নাগরিকরা। এর জবাবদিহি এবার করতে হবে বিভাগীয় কর্মকর্তা সহ নেতা মন্ত্রীদের- এই মর্মে হুমকি দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এক প্রেস বার্তায় বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, অনেকে অজুহাত দিচ্ছেন যে এবারে একদিনে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের জন্যই এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু যা করনীয় ছিল তা যে করা হয়নি এটা জলের মতোই স্পষ্ট। তিনি বলেন, বিডিএফ সহ শিলচরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে যে শহরের খালগুলির আবর্জনা সাফাই শুধু নয় ,আদি গভীরতা অব্দি খনন করে গার্ড ওয়াল দিতে হবে। সেই কাজের শিলাফলক আজও জলজ্যান্ত, কিন্তু কাজ আজ অবধি কতটুকু হয়েছে শহরবাসী মাত্রেই জানেন। জয়দীপ বলেন, ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার পর যে কাজ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করার কথা বলা হয়েছিল, গত তিন বছরে তা যদি সম্পুর্ন না হয়, তবে তাকে বিভাগীয় তথা সংশ্লিষ্ট সবার নিস্ক্রিয়তা বা অপদার্থতা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে ? তিন বছরে যদি অবৈধ দখল ইত্যাদির জন্য পুরো গার্ড ওয়ালের কাজ সম্পন্ন নাও হয়, খালগুলির পুণর্খনন ও আবর্জনা সাফাই করার কাজ শেষ হওয়াতে কোন বাধা ছিল না।
কিন্তু বাস্তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ তথা সরকার। তাই অবশ্যই এর জবাবদিহি তাঁদের করতে হবে।

জয়দীপ বলেন, শিলচরের কিছু এলাকায় সম্প্রতি যেসব নালা তৈরি করা হয়েছে তা জলনিস্কাসন ব্যাবস্থাকে অবশ্যই তরান্বিত করেছে এবং এজন্য পুর প্রশাসন তথা সংশ্লিষ্টদের তাঁরা অবশ্যই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান না হওয়ায় জন্যই আবার জমা জলের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বৃহৎ সংখ্যক জনগনকে।
তিনি বলেন, সোনাই রোডের উচ্চতা বৃদ্ধি করার আগেই দুই পাশের এলাকার জলনিষ্কাসন ব্যবস্থাকে কার্যকরী করা জরুরি ছিল। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কনকপুর অঞ্চলের খালগুলির সংস্কার জরুরী ছিল। জয়দীপ বলেন, এই উপত্যকা প্রকৃত অর্থেই অভিভাবক হীন। তাই বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই, যে কোন বিষয়ে স্পষ্ট দিশা নেই এবং সর্বোপরি রয়েছে দুর্নীতি আর ভাগ বাটোয়ারার অঙ্ক। সবটার প্রতিফল ভোগ করতে হচ্ছে স্থানীয় জনগনকে।

বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে বরাকের জলস্তর এখনো বেড়েই চলেছে। নাথপাড়ার বাঁধ ভাঙন এড়াতে আবার সেই চিরাচরিত বাঁশ এবং জিও ব্যাগ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন দশকের পর দশক ধরে একই চিত্র দেখা যায় অথচ বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে সরকার, প্রশাসন সবাই নির্বিকার। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ও পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান কখনই সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে সরকারি প্রতিনিধি, বন্যা বিশেষজ্ঞ,প্রযুক্তিবিদ এবং সচেতন নাগরিকদের দিয়ে একটি কমিটি গড়ে এব্যাপারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী সময় ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে এই উপত্যকার বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হোক। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে বিডিএফ সহ শহরের বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে সবটাই সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অন্যথা বর্তমান তথা আগামী দুর্ভোগের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা সরকার সম্পুর্নভাবে দায়ী থাকবে। বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন