ভাষা ব্যবহার, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত কার্যকর না করায় ক্ষোভ বরাকবঙ্গের
বরাক তরঙ্গ, ১০ জুন : ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘আসাম সরকারি ভাষা আইন ১৯৬০’ সংশোধন করে তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড় জেলায় বাংলা ভাষা ব্যবহারে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ওই সংশোধনী অনুসারে অবিভক্ত কাছাড় জেলা তথা বর্তমান বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা হল বাংলা এবং এখানে সমস্ত ধরনের কাজে বাংলাভাষা ব্যবহার আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক বৈঠকেও এ নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ নেওয়া হয়। কিন্তু কাছাড় জেলায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করায় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করা হয়। মঙ্গলবার সম্মেলনের এক প্রতিনিধি দল জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে এক স্মারকলিপি প্রদান করে।
তাঁরা বলেন, বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্বেও এখানে এ ভাষা আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশিকা, প্রপত্র, নিয়মাবলি, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি বিভিন্ন নিযুক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশাসন এ ভাষা আইন উপেক্ষা করছে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন ভাষা আইনের প্রতি এ উদাসীনতা নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছে। তাঁরা স্পষ্টভাবে জানান, এর প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। এটা উপত্যকার ভাষাকেন্দ্রিক ভাবাবেগকে আহত করছে, এবং আইন অনুসারে পাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে শান্তি ও সম্প্রীতির আবহে বিঘ্ন ঘটানোর সম্ভাবনাও স্পষ্ট করে তুলছে। তাদের কথায়, আসাম সরকারি ভাষা আইন অনুসারে উপত্যকার অভ্যন্তরিণ যোগাযোগের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি ও প্রশাসনিক তরফে উপেক্ষা নতুন করে মানুষের মনে বিক্ষোভের সৃষ্টি করলে এর দায়ভার বর্তাবে সরকার ও প্রশাসনের উপর।
কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব অবশ্য মনোযোগ সহকারে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের জানান, এ ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন, এক-দুইদিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন এই নির্দেশ জারিতে দেরি হয়ে গিয়েছে বলেও তিনি বঙ্গ সাহিত্যের প্রতিনিধিদের বলেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত, সাংগঠনিক উপ-সমিতির আহ্বায়ক অনিল পাল, সাহিত্য সম্পাদক দীপক সেনগুপ্ত, কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর, প্রাক্তন সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী ও সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা।
