বাবার মতো নীরবে চোখের জল ফেলা শিখলাম না
।। ববিতা বরা ।।
(এসআই, শিলচর)
১৫ জুন : ‘বাবা’ মানেই শনিবার রাতের অপেক্ষা, পেট্রোলের ধোঁয়ার ঘ্রাণ, দেওদার গাছগুলোর সৌন্দর্য, দূর্বা ঘাসে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু ভেদ করে আসা রোদের মুক্তো, বা দশ টাকার চকলেটের মোড়কে লেগে থাকা সোনালী কাগজের গুরুত্ব।
বাবা আমাদের কখনও স্বার্থপর হতে শেখাননি। বাবা আমাদের মানুষকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছেন। বাবা শিখিয়েছেন কীভাবে অনুভূতিগুলো অনুভব করতে হয়।
সেদিন যদি বাবা ফেরার পথে আনা চকলেটটা লুকিয়ে শুধু আমাকে খাইয়ে দিতেন, তাহলে হয়তো আমি শিখতাম কীভাবে স্বার্থপর হতে হয়। ভর বর্ষার মধ্যেও যদি বাবা কাজে না যেতেন, তাহলে হয়তো আমি বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দটা উপভোগ করতে শিখতাম।
ভালোবাসা দিয়ে দেয়া পঞ্চাশ টাকা যদি তিনি ফোনের কভারে রেখে আমার নামে মন্দিরে উৎসর্গ না করতেন, তাহলে হয়তো আমি ঈশ্বরকে ভয় করতাম না।
বিহু কিংবা পুজোর সময় সাধ্য অনুযায়ী কেনা গেঞ্জি আর চুড়িদার ‘বাবুকাকা’ বা ‘কেরালা কাকা’র মতো মানুষদের দিয়ে কারও মুখে হাসি ফোটানো — এই ভালো লাগার অনুভূতিগুলো যদি বাবা না শেখাতেন, তবে আজ হয়তো আমি আমার অ্যাকাউন্টে আরও কিছু টাকা জমাতে পারতাম।
ফাটা গেরুয়া জামা, সীমিত কয়েকটি কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে বিহু, পুজোর সময় বাবা যদি না পরতেন, তবে হয়তো বাহ্যিকতায় মুগ্ধ হওয়াটাই আমার স্বভাব হয়ে উঠতো।
বাবার জন্য আমি অনেক কিছুই শিখতে পারিনি। বাবার জন্য আমি অনেক মানুষকে চিনে উঠতে পারিনি। বাবার জন্যই — যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, তাদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে শিখিনি।
সবাই বলে, আমি নাকি বাবার মতো।
‘বাবার মেয়ে’ বললে হয়তো মায়ের মনেও একটু ঈর্ষা জাগে। তবু বাবার প্রতি আমার আক্ষেপ — আমি বাবার মতো হতে পারলাম না। বাবার মতো নীরবে চোখের জল ফেলা শিখতে পারলাম না। বাবার মতো নিঃশব্দে অভিযোগগুলো গোপন রাখতে পারলাম না। বাবার মতো এত ধৈর্যশীল, উদার, স্নেহময়, নিষ্পাপ হতে পারলাম না। আমি বাবার মতো নিষ্পাপ হতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি বাবার চোখের মতো পবিত্র হতে পারিনি।
