স্বার্থ সিদ্ধির ফন্দি, প্রথা ভেঙে নিলাম বিহীন ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা!

অমিতা পাল, কাটিগড়া।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ মার্চ : সনাতন ধর্মের আবেগ জড়িত মেলায় স্বার্থ সিদ্ধির ফন্দি! প্রথা ভেঙে নিলাম বিহীন ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা! অবৈধ রকি, চরকি, হাউসি বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করলেও সরকারি খাতায় রাজস্ব শূণ্য। রাত পুহালেই মধুকৃষ্ণ ত্রেয়োদশী, এই তিথিতে পিতৃপুরুষের উদ্দ্যেশ্য স্নান তর্পণ এবং পিণ্ডদান করতে সিদ্ধেশ্বর কপিলাশ্রমে বরাক নদীর ঘাটে ভিড় জমান লক্ষলক্ষ পূণ্যার্থী। আর এনিয়ে বরাক নদীর উত্তর তীরে বসে সিদ্ধেশ্বর বারুণীমেলা। ধর্মীয় আবেগ জড়িত প্রায় ২০০-২৫০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এই মেলা পরিচালনার জন্য রয়েছে কিছু নীতি-নির্দেশিকা। সুষ্ঠ সুন্দর ভাবে মেলা পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় মেলা পরিচালন কমিটি। প্রতি বছর নিয়ম করে সরকারিভাবে এই মেলা নিলাম করা হয়ে থাকে। মেলা থেকে সংগৃহীত রাজস্ব যায় সরকারের ঘরে। পরবর্তীতে এই অর্থের একটা অংশ বরাক উপত্যকা সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়ে থাকে। এবছর আচমকাই নিলামের প্রথা ভেঙে মেলা করতে যাচ্ছে পরিচালন কমিটি। পদাধীকার বলে কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত এই কমিটির সভাপতি। গতিকে জেলা আয়ুক্তের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনসাধারণ। ধারাবাহিক প্রথা ভাঙার কারণ নিয়ে স্থানীয়দের মনে দেখা দিয়ে হাজার প্রশ্ন। এনিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মেলা নিলাম বন্ধ রাখার আসন রহস্য কী?

সূত্র বলছে, এবছর মেলা থেকে মোট ১৭৬৬৫০০ টাকা (সতেরো লক্ষ ছেশোট্টি হাজার পাঁচ শত টাকা) সংগ্রহ করার এক শীতল পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে মেলায় ভিটে পাওয়ার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হচ্ছে ১৭০ টাকা। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। এই সংখ্যাটা যদি ৪৫০ ধরা হয় তাহলে দাঁড়ায় ১৭০×৪৫০ = ৭৬৫০০ টাকা। এটা শুধু দরখাস্ত বাবদ। মেলায় স্থায়ী দোকান বসে প্রায় ৪০০ কাছাকাছি। সংখ্যাটা যদি ৩৫০ ধরা হয়, এতে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০×২০০ = ৭০০০০ টাকা। সপ্তাহে দুটি হাট বসে। এক মাসে ৮টি হাট, সেই হিসেবে হাটের অস্থায়ী দোকান থেকে যদি ১৫০০০ টাকা সংগ্রহ হয় তার পরিমাণ হবে ১৫০০০×৮ = ১২০০০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে ১২টি রকি (লটারি) দোকান। যে দোকান গুলিতে দিনরাত অবাধে চলে জোয়ার আসর। এই সব দোকান থেকে রীতিমত দর কষাকষি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। এক বিশেষ সূত্রের খবর, এবছর এই ১২টি রকির দোকানকে ৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার টার্গেট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর মেলায় দুটি হাউসি বসে। এই দু’টি হাউসিকে দু’লক্ষ টাকা টার্গেট দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে অন্তত এই দু’টি থেকে আদায় করা হবে কমেও ৩ লক্ষ টাকা। কারণ এগুলো মেলাতে অবৈধ! মেলায় প্রতি বছর একাই সব থেকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে থাকে চরকি। বিগত দিনের হিসেব নিয়ে দেখা গেছে তাকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হয়। এই সংখ্যাটা যদি ৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়, তাহলে সব কিছু মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭,৬৬,৫০০ টাকা (সতেরো লক্ষ ছেশোট্টি হাজার পাঁচ শত টাকা)। তাহলে এই বিশাল অঙ্কের টাকাটাই কী মেলা নিলাম না হওয়ার আসল রহস্য? বিগত কিছুদিন থেকে কাটিগড়ার আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্ন। কাদের স্বার্থে চিরাচরিত প্রথা ভেঙে মেলার নিলাম বন্ধ রেখেছে কমিটি।

স্বার্থ সিদ্ধির ফন্দি, প্রথা ভেঙে নিলাম বিহীন ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা!

এনিয়ে চলছে চুরচেরা বিশ্লেষণ। স্থানীয় একাংশের মতে, মেলা পরিচালন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ও তার ভূমিকা নিয়ে রয়েছে হাজার প্রশ্ন। কারণ প্রতি বছর মেলা আসার পর কিছু কিছু ব্যক্তিকে মেলা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয় হতে দেখা যায়। যে সকল ব্যক্তি বছরের এগারোটি মাস সমাজ থেকে প্রায় অদৃশ্য হয়ে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে মার্চেন্ট কমিটির পদাধিকারীদের নীরব ভূমিকা সন্দেহের উর্ধে নয়। সব মিলিয়ে সনাতন ধর্মের আবেগ জড়িত বরাক উপত্যকার ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বর বারুণী মেলার নিলাম বন্ধ রাখার নবীন সংস্করণ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

স্বার্থ সিদ্ধির ফন্দি, প্রথা ভেঙে নিলাম বিহীন ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা!

Author

Spread the News