ঈদগাহে ভিড়, মেলায় উৎসব, সম্প্রীতির এক অনন্য নজির পাথারকান্দিতে

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ মার্চ : পাথারকান্দি কেন্দ্রের সর্বত্র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হল ঈদ-উল ফিতর। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর সোমবার সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই ছিল খুশির জোয়ার।
সকালে পাথারকান্দির কটামণি, কাঁঠালতলি, আছিলমগঞ্জ, চান্দখিরা, ডেঙারবন্দ, টিলাবাড়ি, জোড়বাড়ি, ডেফলআলা, মামবাড়ি, মূরবন্দ, নাগ্রা, ঝেরঝেরি, সেম্বুনগর, রাঙ্গামাটি, বড়ছবড়ি, লোয়াইরপোয়া, জালানগর, বৈঠাখাল, বাজারিছড়া, চন্দ্রপুর, কালাছড়া, ছগলমোহা এবং অন্যান্য স্থানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নতুন পোশাকে ঈদগাহে সমবেত হন, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং দোয়া মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন। নামাজ শেষে বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিমুখ ও আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়।

ঈদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল পাথারকান্দি বিধানসভার দক্ষিণ প্রান্তে অসম-মিজোরাম-ত্রিপুরা সীমান্তঘেঁষা ঐতিহ্যবাহী কটামণি বাজারের ঈদ মেলা। সেখানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীরাই অংশ নেয়। বাহারি খেলনা, খাবার ও পোশাকের দোকানে উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় নাগরদোলা, বায়স্কোপ ও পুতুলনাচের আয়োজনও ছিল, যা ছোটদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ।

ঈদের উৎসব শুধু আনন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সামাজিক সংহতিরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়, প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া এলাকার বিশিষ্টজনরা ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে যান, সেখানে দান-খয়রাত করেন এবং বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটান।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাজারিছড়া ও পাথারকান্দি থানা অধীন বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর ছিল। ঈদের একদিন আগ থেকেই কটামনি বাজারে স্থানীয় পুলিশের টহলদারি জোরদার করা হয়, যাতে ঈদের বাজার ও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী।
কটামণি বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “ঈদ মানেই আনন্দ, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানো, মিষ্টিমুখ করা, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া—সব মিলিয়ে দিনটি ছিল অনন্য।” তিনি আরও বলেন, “ঈদের এই আনন্দ যেন সবার জীবনে সুখ ও শান্তি বয়ে আনে—এমনটাই আমাদের কামনা।”

ঈদের আনন্দে সেজে উঠেছিল পুরো পাথারকান্দি বিধানসভা। প্রতিটি এলাকায় ঈদগাহ ও মসজিদগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিল। সর্বত্রই ছিল সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও আনন্দের আবহ। ঈদের দিনটি কেবল আনন্দের নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও মানবিকতার এক প্রতীক হয়ে উঠেছিল। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির ফলে ঈদ উদযাপন সম্পন্ন হয় সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে।