মাদক বিরোধী দিবস পালন করিমগঞ্জের নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে “উদিচী” সংস্থার

দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৬ জুন : প্রথমবারের মতো করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বেড়াজাল গ্ৰামস্থিত ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীনে থাকা “উদিচী” সংস্থার দ্বারা পরিচালিত জেলা নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস পালন করা হয় এক সচেতনতা মূলক সভার মধ্য দিয়ে। সভায় প্রথমে উপস্থিত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ চৌধুরী, নেশামুক্তি ও  পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রকল্প সঞ্চালক তাহির আহমেদ তাপাদার, প্রধান অতিথি হিসেবে  ১৬ বিএন বিএসএফের অ্যাসিটেন্ট কমান্ডার এবং মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দিবিইয়া ও নাসিং সহকারী পঙ্কজ কুমার, সমাজসেবী মজিবুর রহমান, উদিচী সংস্থার প্রতিনিধি হুসেন আহমেদ ও কর্মকর্তা সাহদদ হুসেন বড়ভূইয়া প্রমুখ উত্তরীয় দিয়ে সম্মান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে কবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, নেশা বা মাদকাসক্তি হল এমন এক মানসিক বা শারীরিক অবস্থা যা মাদকের সঙ্গে জীবিত প্রাণীর মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় এবং তা ওই নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক ক্ষতি যেমন করে, ঠিক তেমনি তাকে মানসিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে চালিত করে সমাজে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলালে আমরা দেখতে পাই মাদকাসক্তির ইতিহাস বেশ প্রাচীন।

মাদক বিরোধী দিবস পালন করিমগঞ্জের নেশামুক্তি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে "উদিচী" সংস্থার

১৬ বিএন বিএসএফের অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডার এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ দিবিইয়া বলেন, মাদক সমস্যার সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক—সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া দরকার।জনসচেতনতার বিকল্প নেই।জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে পারে।সেই সঙ্গে মাদক প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা শিক্ষা,পরিমিত জীবন যাপন,বন্ধু নির্বাচন,দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পথ।সন্তান তার পরিবারের পরিবেশ দ্বারা অনেক প্রভাবিত হয়। তাই পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে নেশাসেবন মুক্ত।সন্তানদের কার্যকলাপ ও সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় যাওয়া আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।সন্তানদের সাথে খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।যাতে তারাই নিজ থেকে তাদের বন্ধুবান্ধব ও কার্যাবলী সম্পরকে আলোচনা করে। ধৈর্য ধরে তাদের সব কথা শুনতে হবে।পরিবারের সকল সদ্যসদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।সন্তানদের মাঝে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করতে হবে।পিতামাতার গুড প্যারেন্টিং বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

প্রকল্প সঞ্চালক তাহির আহমেদ তাপাদার বলেন, মাদক সেবনে মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয়প্রকার ক্ষতিসাধন হয়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে। এসব জীবন বিধ্বংসী ক্ষতিকারক দ্রব্য সেবনের ফলে যুবসমাজের সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে। এরই পরিণাম স্বরূপ ছেলেমেয়ের হাতে মা-বাবা খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি এখনকার দৈনন্দিন ঘটনা। মাদক প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি  বেসরকারি সংগঠন এনজিও, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম বা অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্টজন, মা-বাবা, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।  স্ব স্ব ক্ষেত্রে থেকে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য ও কর্মের মাধ্যমে জনগণকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। স্কুল- কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ  কুফল সম্পর্কে শিক্ষাদান ও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।সেদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাধন দাস, আতিকুর সামাদ, সাজাদুল্লাহ খান, সোমা বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা।

Author

Spread the News