শিলচরে মাদকবিরোধী কর্মসূচি : আইনি সচেতনতা, পুনর্বাসনের পথ ও মানবিক উদ্যোগ
বরাক তরঙ্গ, ২৪ আগস্ট : বর্তমান সমাজে মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ ব্যাধি। যুব সমাজ থেকে পরিবার—সব স্তরেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে আজ জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (DLSA), শিলচর-এর উদ্যোগে এবং লাইফ লাইন হেল্পিং হ্যান্ড সোসাইটি (ডি-অ্যাডিকশন কাউন্সেলিং ও রিহ্যাবিলিটেশন হোম, শিলচর)-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ সচেতনতা কর্মসূচি— “মাদককে না বলুন : আইনি সচেতনতা ও পুনর্বাসনের পথ”।
রিসোর্স পার্সন হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অ্যাডভোকেট ধর্মানন্দ দেব বলেন “মাদকবিরোধী সংগ্রামকে শুধুমাত্র অপরাধ দমনমূলক আইন দিয়ে শেষ করা সম্ভব নয়। আসক্ত ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে নয়, বরং একজন রোগী হিসেবে দেখা জরুরি। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগেই তাঁদের পুনর্বাসন সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (DLSA) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।” তিনি বিস্তারিতভাবে বোঝান যে, DLSA বা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ হলো সংবিধানের ৩৯A অনুচ্ছেদের আলোকে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান, যার লক্ষ্য— “অর্থ বা অন্যান্য কারণে যাতে কোনো ব্যক্তি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন।” তাঁর কথায়—“ভারতের সংবিধানের ৩৯এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকলের জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্যই প্রণীত হয়েছিল Legal Services Authorities Act, 1987। এই আইনের মাধ্যমে জাতীয়, রাজ্য ও জেলা স্তরে আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে।”বরিষ্ট আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব আরও বলেন, “এই আইনের অধীনে দরিদ্র, মহিলা, শিশু, তফশিলি জাতি/তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমিক, বন্দি সহ সমাজের বঞ্চিত ও দুর্বল শ্রেণির মানুষরা বিনা মূল্যে আইনজীবীর সাহায্য, মামলা দায়ের ও পরিচালনা করার সুযোগ পান। এমনকি মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতেও প্রয়োজনে এই পরিষেবা গ্রহণ করা যায়।” তিনি অংশগ্রহণকারীদের আহ্বান জানান, “কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি আইনি সহায়তা প্রাপ্য, তবে তিনি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের অফিসে যোগাযোগ করে এই সুবিধা নিতে পারেন। আদালত, থানা ও ব্লক স্তর পর্যন্ত আমাদের সিস্টেম কার্যকর রয়েছে।”
কর্মসূচির শেষে বন্দিদের সুস্থ বিনোদনের জন্য লুডো, দাবা, ক্যারম ও চাইনিজ চেকার-এর মতো ইনডোর গেমস অ্যাডভোকেট ধর্মানন্দ দেব ও অ্যাডভোকেট শুভসোম দেওয়ানজি যৌথভাবে হোমের ইনচার্জের হাতে তুলে দেন।
হোম কর্তৃপক্ষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে বলেন, এটি বন্দিদের মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং পুনর্বাসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বক্তাদের মতে, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজসংগঠন, স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। আইন, সচেতনতা ও পুনর্বাসন—এই তিন স্তম্ভই মাদক সমস্যার কার্যকর সমাধান আনতে পারে।