শ্রীভূমিতে শহিদ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবস পালন

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১১ আগস্ট : যথাযোগ্য মর্যাদায় ১১ আগস্ট স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর বিপ্লবী শহিদ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান দিবস এআইডিএসও’র করিমগঞ্জ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে পালন করা হয়। সকাল ৯টায় করিমগঞ্জ শহরের কৃষি কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিকৃতি স্থাপন করে পুষ্পার্ঘ অর্পন করেন এসইইসিআই (কমিউনিস্ট) দলের প্রবীণ সদস্য পরিমল চক্রবর্তী সহ প্রদ্যুৎচন্দ্র দাস।

এরপর সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান নিয়ে আলোচনা করেন পরিমল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আজ ১১ই আগস্ট, ১৯০৮ সালের এই দিনটিতেই অগ্নিযুগের অগ্নিশিশু ক্ষুদিরাম বসুকে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক বিচারের নামে প্রহশন করে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। ক্ষুদিরামের এই আত্মত্যাগ বিফলে যায় নি, পরবর্তীতে তাঁর আত্মবলিদান থেকে প্রেরণা লাভ করে হাজার হাজার ছাত্র যুবরা পরাধীনতার নাগপাশ থেকে জন্মভূমিকে মুক্ত করতে জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে মরণ পণ সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। অবশেষে ক্ষুদিরাম সহ অগণিত শহিদের আত্মবলিদানে ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। ক্ষুদিরামের স্বপ্নের  ভারতবর্ষ ছিল শোষন মুক্ত দেশ, যেখানে সবার জন্য থাকবে বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, থাকবে না ধনী গরীবের পার্থক্য। তিনি প্রশ্ন তুলেন সেই ভারতবর্ষ কি আমরা পেয়েছি? স্বাধীনতা লাভের প্রায় সাত দশক পর শিক্ষা আজ পণ্য টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে হয়, চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ আজ সর্বশান্ত হচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র আজ চরম সংকটের সম্মুখীন। চূড়ান্ত ব্যক্তিবাদ, অবিশ্বাস, হীনমান্যতা জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। সমাজ জীবনে নিরাপত্তাহীনতা, উশৃঙ্খলতা, অপসংস্কৃতি, অন্যায়-অবিচার ক্রমবর্ধমান। বেকারত্ব, অভাব-অনটন, হিংসা-দ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা,  অশিক্ষা, কুশিক্ষার ফলে নাগরিক জীবনে আজ এক শ্বাসরুদ্ধকারী অবস্থা বিরাজ করছে। বিজ্ঞানের বিকাশের ফলে আজ গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের পরও শাসকগোষ্ঠী ক্ষুদিরাম,ভগৎ সিং, নেতাজি, মাস্টারদা সূর্যসেন এর মত বিপ্লবীদের জীবন সংগ্রাম এবং তাদের অবদানকে দেশ ও সমাজের কাছে তুলে না ধরে আড়াল করছে।

এমতাবস্থায় আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে শুধুমাত্র জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনই যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পথ নয়। মহান বিপ্লবীদের জীবন সংগ্রামকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে যে মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা সংগ্রাম করেছিলেন এবং আজও যা অপূরিত, যুগোপযোগী আদর্শের ভিত্তিতে সেই কাজে আত্মনিয়োগ করার।

Spread the News
error: Content is protected !!