তীব্র লোডশেডিং, সরব কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন

বরাক তরঙ্গ, ৩০ জুলাই : অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন এর কাছাড় জেলা কোর্ডিনেশন কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা শিলচরের ডিমাসা সাংস্কৃতিক পরিষদ হলে অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সভায় উপস্থিত সদস্যরা বলেন বর্তমানে এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত অবিবেচকভাবে তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ কর্তন করায় জনগণ মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে অসম সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে অতীতের লোডশেডিং এর সমস্ত রেকর্ড ভেঙে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সময়ের জন্য বিদ্যুৎ কর্তন করা হচ্ছে। এরফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে অসুস্থ, বৃদ্ধ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

আজকের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সভায় উপস্থিত কোর্ডিনেশন কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা নির্মল কুমার দাস বলেন বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২৩ সংসদে উত্থাপিত করা হলেও এখনও আন্দোলনের চাপে তা প্রণয়ন করাতে পারেনি। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার মতো বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যাবস্থার ব্যাক্তিগতকরণ ঘটানো। তিনি বলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো সরাসরি আইন প্রণয়ন করে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যাবস্থার ব্যক্তিগতকরণ করতে না পারলেও ঘোরপথে স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যাবস্থাকে ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। স্মার্ট মিটারের কারিগরি দিক ব্যখ্যা করে তিনি বলেন এই মিটার গ্রাহকদের ব্যবহার করা বিদ্যুৎ পরিমাপের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় যে পরিমানের বিদ্যুৎ কারিগরি ত্রুটির জন্য নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো গ্রাহকদের বিলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার হয় বলে ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে ফলে বহু দেশে এই ধরনের মিটার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্পোরেটদের স্বার্থে ভারতে এই মিটার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই মিটারের বিরুদ্ধে যে তীব্র আন্দোলন দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে তা আরও শক্তিশালী করতে তিনি আহ্বান জানান।

সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চাম্পালাল দাস, মানস দাস, রঞ্জিত চৌধুরী, মৃনালকান্তি সোম প্রমুখ বলেন স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে জনগণের যে ক্ষোভ রয়েছে তা সম্প্রতি এপিডিসিএল এর পক্ষ থেকে গ্রামীণ এলাকার জনগণের নতুন কানেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে ২ কেভি পর্যন্ত ডিজিটাল মিটার নিতে পারবে বলে ঘোষণায় বোঝা গিয়েছে। এই সামান্য ঘোষণায় জনগণ তাদের ঘরে বসানো স্মার্ট মিটার খুলে নেওয়ার দাবি বিভিন্ন স্থান থেকে পুনরায় উত্থাপন করেন। সংগঠনের ধোয়ারবন্দ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহন লালা মালা, সম্পাদক রামকুমার বাগতি, ধোয়ারবন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নং গ্রুপের নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধি স্বপন বাউরি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় স্মার্ট মিটার আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের ঘরে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে তাদের সবার অভিযোগ স্মার্ট মিটার বসানোর পর তাদের বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্মার্ট মিটারে ব্যবহার করে জনগণের লাভ হয়েছে বলার সত্যতা যাচাইয়ের দাবি তোলা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। সংগঠনের অন্যতম সদস্য পরিতোষ ভট্টাচার্য, খালেদা বেগম লস্কর, গৌরিশ দেব প্রমুখ বলেন পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকার স্মার্ট মিটার বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু আসাম সরকার এর পক্ষে এখনও প্রচার চালাচ্ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগের। জনগণের স্বার্থের প্রতি সরকারের যে কোনো দায়বদ্ধতা নেই তা এই ঘটনায় প্রমাণিত। সভায় শ্রমিক নেতা অসীম নাথ বলেন শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুন্ঠনের যন্ত্র হচ্ছে এই স্মার্ট মিটার। তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে স্মার্ট মিটার নতুন করে প্রতিস্থাপন না করা এবং যাদের ঘরে ইতিমধ্যে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এইগুলো পরিবর্তন করে পুরোনো ডিজিটাল মিটার বসানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হবে।

পাশাপাশি জেলার জনগণের কাছে আজকের সভা থেকে আহ্বান জানানো হয় কারো ঘরে ব্যাবসায়িক কোম্পানির পক্ষ থেকে জোর করে স্মার্ট মিটার চাপিয়ে দিতে চাইলে তারা যাতে প্রতিবাদে সোচ্চার হন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে বিদ্যুৎ আইন, ২০০৩ এ মিটার পরিবর্তনের যে নিয়ম রয়েছে তাতে কারও ঘরে জোর করে মিটার চাপিয়ে দেওয়ার উল্লেখ নেই।

Spread the News
error: Content is protected !!