শ্রীভূমির সাহিত্য জগতে এক নতুন সংযোজন ‘উত্তরসূরি’

শুভ দাস, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৭ জুলাই : শ্রীভূমির সাহিত্য জগতে সংযোজিত হল এক নতুন দীপ্ত সংকলন উত্তরসূরি সাহিত্য পত্রিকা। শনিবার এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের আবাসে আয়োজিত এক হৃদয়গ্রাহী সাহিত্য সন্ধ্যায় এই পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এদিন এই পত্রিকার দু’টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়, ত্রৈমাসিক এবং মাসিক। ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত সাহিত্যিকদের কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ছোটগল্প ও অনুবাদ এবং এটি প্রতি তিনমাস অন্তর প্রকাশিত হবে। মাসিক বৈঠকী সংস্করণটি মূলত উত্তরসূরি আয়োজিত মাসিক বৈঠকী পত্রিকা। এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এর সাহিত্যকৃতি ও তাঁর প্রাসঙ্গিকতা। পাশাপাশি, জীবনানন্দ দাশের কাব্যজগত নিয়ে ছিল এক মনোজ্ঞ আলোচনাপর্ব।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ও সঞ্চালক রঞ্জন ভট্টাচার্যের সংবেদনশীল ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সঞ্চালনায়। অতিথিদের আসন গ্রহণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও উদ্বোধনী সঙ্গীতে ভরে ওঠে সাহিত্যিক আবহ। সুরেলা পরিবেশনায় সুরভী সাহা ও মণিদীপা দেব অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের হৃদয় জয় করেন। তাদের কণ্ঠে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ যেন নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করে মুহূর্তটিকে।

শ্রীভূমির সাহিত্য জগতে এক নতুন সংযোজন 'উত্তরসূরি'

পত্রিকার সম্পাদক ড. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য স্বাগত ভাষণে বলেন, উত্তরসূরি শুধুই একটি পত্রিকা নয়, এটি একটি মননের প্রতিচ্ছবি। তিনি সাহিত্যচর্চার সামাজিক ভূমিকা এবং প্রজন্মান্তরের মধ্যে সেতুবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও পত্রিকার উপদেষ্টা ড. তপোধীর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এই সাহিত্যচর্চা শুধু উত্তরসূরিদের দায়িত্ব নয়, বরং একটি বৃহৎ মানবিক যাত্রার অংশ। উত্তরসূরি তারই সাক্ষ্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র সদন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সব্যসাচী রায়। তিনি তরুণ সমাজের মধ্যে সাহিত্যসচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সাহিত্যচর্চার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। আমন্ত্রিত অতিথি শ্রীভূমির বিদ্যালয় পরিদর্শক নিলমজ্যোতি দাস বলেন একটি জাতির সামগ্রিক উন্নতির জন্য সাহিত্যচর্চা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, অসমিয়া এবং বাংলা এক অন্যের পরিপূরক। নিজের মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে অন্য ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অসমিয়া তার মাতৃভাষা হলেও বাংলা তার খুব ভালো লাগে এবং বাংলাকে সুমিষ্ট ভাষা বলে উল্লেখ করে কবিগুরুর ভারততীর্থ কবিতার কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করেন। বিশিষ্ট সাহিত্য অনুরাগী শিক্ষক সুব্রত চৌধুরী এই সময়ে যুব সমাজে সাহিত্য আলোচনার কতটুকু প্রয়োজন তার গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

কবিতা পাঠ করেন শিবানী গুপ্ত, মোহনা পত্রিকার সম্পাদক বনানী চৌধুরী, ছন্দা দাম, সুস্মিতা ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, চান্দ্রেয়ী দেব এবং সুস্মিতা দাস। বৈশালী কর ও সোনম দে-র পরিবেশিত গান শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহযোগী সম্পাদক ও কবি সাহিত্যিক ড. অর্পিতা দাস। তিনি বলেন, উত্তরসূরি কেবল একটি পত্রিকা নয়, আমাদের চেতনার আত্মপ্রকাশ। পাঠ ও পাঠান্তরের সংলগ্নতায় এ পথ চলা অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে জীবনানন্দ দাশের আবার আসিব ফিরে কবিতাটির কোলাজ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরসূরির সহ-সভাপতি ড. নির্মলকুমার সরকার, শুভ দাস, স্পন্দন মুখোপাধ্যায়, রাজর্ষি মোহন্ত, অপরাজিতা ভট্টাচার্য, চান্দ্রেয়ী দেব, শুভভ্রতা দাস, অর্পিতা রায়, সাংবাদিক বিভাস দাস প্রমুখ।

Spread the News
error: Content is protected !!