দেশ-বিদেশের বক্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম টেড-অ্যাক্স
বরাক তরঙ্গ, ১৯ জুলাই : শনিবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক স্তরের আলোচনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান টেড-অ্যাক্স। এতে অংশ নেন দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বক্তা, গবেষক, সমাজকর্মী, চিকিৎসক, সেনা-আধিকারিক, তথ্যপ্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সহ তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। তাদের আলোচনায় উঠে আসে পূর্ব-ভারতের ঐতিহ্য, সংগ্রাম, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ চিন্তার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবার আয়োজিত টেড-অ্যাক্স অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘পূর্ব দিগন্তের দৃঢ় প্রতিধ্বনি’। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির অধ্যক্ষা সীমা পাল জানান, এই টেড-অ্যাক্স সম্মেলন একান্তভাবে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচেষ্টায় বাস্তব হয়েছে। উপাচার্য রাজীব মোহন পন্থের উৎসাহ ও সহযোগিতায় আমরা এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনা মাত্র। ভবিষ্যতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি আরও বিস্তৃত করব। আমাদের লক্ষ্য, এখানকার ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা ও কণ্ঠ বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া।’

অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ্য বক্তা, পদ্মশ্রী এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসক রবি কান্নান বলেন, ‘এধরনের মঞ্চ শুধুমাত্র বক্তাদের নয়, আয়োজকদের ও শ্রোতাদের মধ্যেও নতুন ভাবনার সঞ্চার ঘটায়। অনেক সময় একজন বক্তার ছোট একটি ভাবনাই বহু মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে এক শক্তিশালী সংযোগের মাধ্যম।’
হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক ও ইউপিএসসি পরীক্ষার সাক্ষাৎকার পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ বিজেন্দ্র চৌহান, চিত্রপরিচালক ও সংস্কৃতি-বিষয়ক গল্পকার অর্ঘদীপ বরুয়া, রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সেনা-আধিকারিক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে শচীন সিংহা, বিনিয়োগ ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে কাজ করা সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মী সাগর তেজওয়ানি, রাজনৈতিক কৌশলবিদ ও সরকারী প্রযুক্তি পরামর্শদাতা কনিষ্ক আগরওয়াল, এনআইটি মিজোরামের গবেষক প্রগতি সিংহ, রোজেকান্দি চা-বাগানের গণধর তথা চা-শিল্প বিশেষজ্ঞ ঈশ্বরভাই উবাদিয়া সহ অন্যান্যরা। অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে এই অঞ্চল থেকে বিশ্বমানের চিন্তা ও গবেষণার সম্ভাবনার কথা। অনেকেই বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি আলোচনা অনুষ্ঠান নয়— একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শিলচরের মতো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলও বিশ্বচিন্তার মানচিত্রে নিজের স্থান করে নিতে পারবে।

অনুষ্ঠানের উত্তর পূর্বের বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। চা শিল্প ও কৃষি সম্ভাবনা নিয়ে ঈশ্বরভাই উবাদিয়া বলেন, ‘এই উপত্যকায় চা ছাড়াও আনারস চাষে সম্ভাবনা রয়েছে। লক্ষীপুর অঞ্চলের আনারস যথাযথ সংরক্ষণ ও বিপণনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বাজার গড়ে তোলা যেতে পারে।’ তাঁর মতে, চা শিল্প বর্তমানে শ্রমিক সংকট, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির মতো নানা সংকটে পড়েছে। তাই নতুন চিন্তা ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগেই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।