বরাকে উন্নয়নের পরিবর্তে উপত্যকার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে : বিডিএফ
বরাক তরঙ্গ, ৭ জুলাই : রেল ও সড়ক পথে বর্তমানে বরাক উপত্যকা বাকি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন। বিমান ভাড়া আকাশছোঁয়া। আভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট বিপর্যস্ত। সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতির বদলে আরো অবনতি হয়েছে। এই নিয়ে এবার সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে একই চিত্র বর্তমান। প্রতি বছর বর্ষায় বরাক উপত্যকা এইভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দশকের পর দশক ধরে এই সমস্যার সমাধানে চূড়ান্ত ব্যর্থ সরকার তথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এরসঙ্গে শিলচর গুয়াহাটি বিমান ভাড়া বেড়ে তের হাজার থেকে উনিশ হাজার টাকা হয়েছে যেখানে আগরতলা থেকে গুয়াহাটির বিমান ভাড়া মাত্র ষোলশ টাকা। তাই এই মুহূর্তে কোন মুমুর্ষু রোগীকে যদি বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হয় তাও কষ্টসাধ্য । জয়দীপ বলেন বিগত দশ বছর ধরে কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের সরকার রয়েছে অথচ এই উপত্যকার জনগনের ভোগান্তি ক্রমবর্ধমান। তিনি বলেন এজন্য এখানকার জনপ্রতিনিধিরাই মূলতঃ দায়ী।
জয়দীপ বলেন, পাহাড় লাইন ও মেঘালয়ের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি এমনই যে প্রতিবছর ধ্বস, ভূমিস্খলণ ইত্যাদি হবেই। তাই বিকল্প রাস্তা ও রেললাইন নিয়ে বহুবছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বরাকের নাগরিকরা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন বিগত ২৮ বছর ধরে মহাসড়কের কাজ চলছে অথচ ডিমাহাসাও জেলার ২৩ কিঃমিঃ অংশের কাজ কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। যদিও বলা হচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে এই কাজ শেষ হবে তবে তাও কতটা বিশ্বাসযোগ্য বলা মুশকিল। অথচ গুয়াহাটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শিলচর হারাঙ্গাজাও, তুরুক, পাণিমোড়, উমরাংশু, জাগিরোড হয়ে একটি বিকল্প সড়ক খুব অল্পসময়ে তৈরি করা সম্ভব কারণ এই সড়কের অনেকটাই তৈরি শুধু বাকি অংশ মেটালিং করে এটিকে অবিলম্বে কাজ চালানোর মতো অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। এতে ৭০ কিঃমিঃ দূরত্ব কমবে, ৭ ঘণ্টায় গুয়াহাটি পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু এই নিয়ে জনগণের পক্ষ থেকে বারবার দাবি উঠলেও সরকার নির্বিকার। এছাড়া চন্দ্রনাথপুর-লঙ্কা বিকল্প রেললাইন নিয়ে পরপর দু’বার জরিপ শেষ হলেও কাজ আদৌ কবে শুরু হবে এনিয়ে কোন আশ্বাস পাওয়া যায় না।
জয়দীপ বলেন, বরাকের পনেরো জন বিধায়ক, তিনজন সাংসদ এই ব্যাপারে চূড়ান্ত ব্যর্থতার নজির গড়েছেন। এমনকি জনগণের স্বার্থে বিমানভাড়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তাঁরা ব্যর্থ। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় বেসরকারি বিমান কোম্পানি গুলিকে সরকারের তরফে ভর্তুকি দিয়ে হলেও বিমানভাড়াকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা উচিৎ ছিল। তিনি আরো বলেন যে বরাক উন্নয়ন বিভাগ খোলার পর থেকে এযাবৎ শুধু প্রতিশ্রুতিই শোনা যাচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারাপুরের বা শিলচরের উড়াল সেতু,রাঙির খালের সংস্কারের কাজ, গ্যামন সেতু বা হারাং সেতু সংস্কারের কাজ সবেতেই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে এযাবৎ ব্যর্থ হয়েছে এই বিভাগ।
জয়দীপ বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গাড়কারি ভারতের সড়ক পরিবহনের মান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ বলে দাবি করছেন,যেখানে সড়ককে রানওয়ে হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে, যেখানে দেশে বুলেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা চলছে, সেখানে বরাক উপত্যকার মতো একটি ভুখণ্ড, দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যার ভৌগলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ, আজকের দিনে তাঁর এই বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা বঞ্চনাই দায়ী। তিনি বলেন, যদি অবিলম্বে এই ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ নিতে সরকার তথা স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদরা আগ্রহী না হন তবে আগামী নির্বাচনে অবশ্যই এরজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।