ঐতিহ্য-ভক্তি-ঐক্যের মিলনক্ষেত্র, খালোপারে ১৯৫তম সপ্তরথ উৎসব
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৫ জুলাই : ঐতিহাসিক ১৯৫তম খালোপার সপ্তরথ উৎসবে জনস্রোতে ভেসে উঠল পাথারকান্দির মাটি তীর্থভূমির রূপ নিল মন্ত্রীগ্রাম! সম্পন্ন হলো ঐতিহাসিক ১৯৫তম খালোপার সপ্তরথ উৎসব। পাথারকান্দির সাতটি গ্রাম দক্ষিণ বিলবাড়ি, উত্তর বিলবাড়ি, পাত্রগ্রাম, পেকুরগ্রাম, নয়াডহর, ছাত্রাগ্রাম ও মন্ত্রীগ্রাম—এই সাত গ্রামের মিলনে, আজ মন্ত্রীগ্রামের রথমাঠ পরিণত হল এক অভূতপূর্ব ধর্মতীর্থে।

দিনের কাঠফাটা রোদ্দুর ও পরে বিলের দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করে, ছায়াহীন প্রান্তরে যেন জনসমুদ্রের ঢেউ নেও রথের কাদামাখা মাঠ। সাতটি গ্রামের সুসজ্জিত রথ, গরু-হাতির দ্বারা টানা হয় এক অপার উল্লাসের মধ্যে। রথযাত্রার ছন্দে, ভক্তিগীতি আর ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিগ্রহকে বহনকারী রথ এসে মিলিত হয় মন্ত্রীগ্রামের ঐতিহাসিক মিলনস্থলে। রথমিলনের পর প্রতিটি গ্রাম থেকে নির্বাচিত ৫০ জন যুবক-যুবতী মিলে আয়োজন করেন ‘কেশব ধৃত মীন শরীর, জয় জগদীশ হরে’ গানের মাধ্যমে জয়দেব অনুষ্ঠান।

ধ্রুপদী ভঙ্গিতে সেই পরিবেশনায় অংশ নেয় শত শত ভক্ত, তাল মেলায় জনতা—তাল-খোল-মন্দিরার সমবেত আওয়াজে কেঁপে ওঠে সাত গ্রামের মিলনস্থল। এ যেন শুধু উৎসব নয়, এ এক আধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম—যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলনের এক অপূর্ব প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হয়েছে।বছর ঘুরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন সকলেই। ছোটো থেকে বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এই উৎসবকে হৃদয় দিয়ে পালন করেন।

শুধু ধর্ম নয়, এ উৎসব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের বন্ধনের এক প্রতীক এই রথ। খালোপারের সপ্তরথ শুধু একটি রথযাত্রা নয় এ হল আবেগ, ইতিহাস ও হৃদয়ের মহোৎসব!এই উৎসব প্রমাণ করে, শত বছর আগে শুরু হওয়া একটি বিশ্বাস কীভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলেছে শুদ্ধতা, ঐক্য আর ভক্তির ধারাবাহিকতা নিয়ে।