পাথারকান্দি ব্লক বাজারে রথযাত্রায় জনস্রোত
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৪ জুলাই : শঙ্খধ্বনি, কীর্তন আর ভক্তিময় জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল গোটা পাথারকান্দি ব্লক বাজার। শুক্রবার, ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে শহরের বুকে, জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এক অসাধারণ মহোৎসব। এই রথযাত্রা যেন হয়ে উঠেছিল ভক্তি, সম্প্রীতি এবং সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য মিলনমেলা। এদিন পূর্ণ ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতায় পালিত হয় ভগবান জগন্নাথ, ভ্রাতা বলভদ্র ও ভগিনী সুভদ্রার বার্ষিক রথযাত্রা। রথের দড়ি টানতে দেখা যায় হাজারো নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে শিশু ও প্রবীণদেরও। তাঁদের মুখে ছিল ভগবানের নাম, হৃদয়ে ছিল পরম ভক্তি আর হাতে ছিল রথের রশি— যেন স্বয়ং ঈশ্বরের স্পর্শ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল প্রত্যেক হৃদয়।
এই বছর রথযাত্রায় বিশেষ নজর কাড়ে মণিপুরি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত নারী ও যুবতীদের উপস্থিতি। তাঁদের সাজসজ্জা, হাসিমুখ ও পূর্ণভক্তি পরিবেশকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী। রথযাত্রায় নারীশক্তির এমন সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, ধর্মীয় উৎসব আজ আর একমাত্র আচার নয়, এটি সমাজের সকল শ্রেণির আত্মিক সংযোগের এক মহা উপলক্ষ।

রথযাত্রার এই মহোৎসবকে ঘিরে বাজার এলাকায় বসে যায় অস্থায়ী মেলা। পাথারকান্দি ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন রকমারি সামগ্রী নিয়ে। মাটির খেলনা, হাতের তৈরি অলঙ্কার, স্থানীয় খাদ্যপণ্য সব মিলিয়ে চলে জমজমাট কেনাকাটা। শিশুদের জন্য ছিল, বেলুন, খেলনা ফাস্টফুড চানাচুর কাপড় আইসক্রিমের দোকান আর অভিভাবকদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসব যেন হয়ে উঠেছিল এক সামাজিক মিলনস্থল।

এই বিশাল সমাবেশ সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন ও রথযাত্রা কমিটি একসঙ্গে কাজ করে। পুলিশের তৎপর নিরাপত্তা, স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি ও পরিপাটি ব্যবস্থাপনায় কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সমাপ্ত হয় অনুষ্ঠানটি।