অসমে বাঙালিদের অপ্রাসঙ্গিক করার প্রয়াস চলমান
প্রদীপ দত্তরায়
(লেখক প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী)
১৯ জুন : বর্তমান সরকার যে নীতি নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করছে তাতে অসমের বাঙালিদের হাতে এবং ভাতে মারার পরিকল্পনা রয়েছে, এমন সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাঙালিকে কোন ঠাসা করে দেওয়ার জন্য খুব সুকৌশলে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে বঞ্চনা করা, নেতৃত্ব থেকে বঞ্চনা করা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভাজন ঘটিয়ে এক্ষেত্রে সংঘাতের পরিবেশ রচনা করা ইত্যাদি বিষয় সুক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলেই নজরে আসে। সাধারণ জনতা এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না হলেও যারা সমাজ সচেতন ব্যক্তি তাদের নজরে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ঠিকই পড়ছে। এককালে যে অসমের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের আধিপত্য ছিল, আজ তার অবশিষ্ট দেখা যায় না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাঙালির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। শিলংয়ে যখন অসমের রাজধানী ছিল তখন সচিবালয়ের অধিকাংশ কর্মী বাঙালি ছিলেন। কিন্তু এখন সচিবালয়ে বাঙালি কর্মী খুঁজতে দূরবীন ব্যবহার করতে হবে। এটা ধারাবাহিক পরিকল্পনারই অঙ্গ বলা যেতে পারে। অসমে বাঙালিরা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। সে অনুপাতে কর্মসংস্থান, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই যে অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা তা কিন্তু নেই এই রাজ্যে। বঞ্চনার বিষয়টা এখানেই পরিষ্কার হয়ে যায়। এই বঞ্চনা নিয়ে আওয়াজ তুলার মত শক্তির এখন অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে দু-চারজন ব্যক্তি এ নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করতে উদ্যোগী হোন তাদের নানাভাবে অবনত করে রাখার জন্য কুটকৌশল রচনা করা হয়। সরব কন্ঠকে চাপা দিয়ে রাখতে পরোক্ষে ভীতিসঞ্চার করা হয়। হেনস্তার ভয়ে অনেকেই তাদের ভূমিকা একটু একটু করে বদলে ফেলতে বাধ্য হন। বঞ্চনার মধ্যে দিয়ে এ রাজ্যে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হয়েছে এ বিষয়ে অনেক কথাই বলার আছে। তবে এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে এই বিষয়গুলোকে যুক্তিসহকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অসমে সাদুল্লা মন্ত্রিসভার পতন ঘটিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠন করে অসমসহ গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলকে পাকিস্তান ভুক্তি থেকে রক্ষা করেছিলেন। নেতাজি শিলচরের জননায়ক অরুনকুমার চন্দ, সতীন্দ্রমোহন দেব এবং বৈদ্যনাথ মুখার্জির সহযোগিতা নিয়ে গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠন করেন। কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠনের সময় শর্ত ছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে একবার মুখ্যমন্ত্রী হলে পরের বার সুরমা উপত্যকা থেকে হবে। কিন্তু ১৯৪৪ সালে যখন মন্ত্রিসভা গঠনের উদ্যোগ শুরু হল তখন সুরমা উপত্যকার নেতা বসন্তকুমার দাসের নাম কেউ প্রস্তাব করলেন না। এ অবস্থায় বসন্তকুমার দাস নিজে বাধ্য হলেন গোপীনাথ বরদলৈর নাম প্রস্তাব করতে। অসমে সরকার গঠনের এই উদ্যোগের পেছনে সুরমা কাছাড়ের বাঙালিদের যে আসল অবদান সে কথাটা বারবার অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষা বিল চাপিয়ে দিয়ে তৎকালীন কাছাড় বা বরাক উপত্যকার মানুষকে মানসিকভাবে নিপীড়নের সম্মুখীন করে তোলা হয়েছে। অথচ, ভারতের লিঙ্গুইস্টিক কমিশন যখন অসমে এসেছিল এখানকার জনবিন্যাস দেখে এই রাজ্যকে বহুভাষিক রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করে যায়। সরকারকে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার এক শ্রেণির উগ্র জাত্যাভিমানী নেতা রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর উপর অসমিয়া ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বারবার করে এসেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহত্তর অসম রাজ্য ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়েছে। অন্যভাষিকগোষ্ঠীকে অবদমন করে রাখার মানসিকতা অসমের প্রগতিকে অনেকখানি বাধাগ্রস্ত করেছে। এই মানসিকতা এখনও বিদ্যমান তবে কেবল এর ব্যবহারই প্রয়োগের দিকটা পরিবর্তিত হয়েছে।
বরাক বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিদের দাবিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল স্বাধীনতার সময়। এরপর ১৯৫১ সালের জনগণনায় দেখা গেল। সংখ্যালঘু অসমিয়া ভাষিক জনগোষ্ঠী হঠাৎ করে সংখ্যাগুরুতে পরিণত হয়ে গেছেন। জনগণনার কাজে যে কারচুপি করা হয়েছে এটা সেন্সাস কমিশনের নজর এড়ায়নি। সেন্সাস কমিশনার এই জনগণনার রিপোর্ট নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন এটা একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কোন একটি জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা রাতারাতি অর্ধেকের চেয়েও কম হয়ে গেছে আবার কোন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে এটা কিভাবে সম্ভব? ৫১ সালের জনগণনা বা আদমশুমারিতে যে কাণ্ড ঘটানো হয়েছে এর সূত্র ধরেই ১৯৬০ সালে ভাষা বিল পেশ করা হয় বিধানসভায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা অসমিয়া রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মানুষকেই মেনে নিতে হবে এমন ফরমান দিয়েই বিলটি পাস হয়। এরপর এ নিয়ে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে সারা রাজ্যজুড়ে। অসমের পার্বত্য নেতারা এই ভাষা সূত্র মানতে রাজি হননি, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। শিলচরে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলন এমন তীব্র আকারে পৌঁছে যে উনিশ মে ১১জনকে পুলিশের গুলিতে প্রাণাহুতি দিতে হয়। এরপরও মার কয়েক ভাষা সার্কুলার জারি করে রাজ্যের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে রাখার চেষ্টা চালানো হয়। আর এর পরিণতিতেই বৃহত্তর অসমিয়া সমাজ বিভাজিত হয়ে পড়ে। এই বিভাজনের ফল এখন সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে।
অগপ সরকারের আমলে বরাক উপত্যকা যথেষ্ট বঞ্চনার শিকার হয়েছে। শিলচরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এই দলটি। বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হওয়ার পর জমি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু হিতেশ্বর শইকিয়া বা তরুণ গগৈ এর আমলে বাঙালিদের প্রতি অনেকটা সুবিচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকে যেমন বাঙালিদের নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি আমলা স্তরেও উচু পদে যোগ্য বাঙালিদের পদ দিয়ে রাখা হয়েছিল। তরুণ গগৈর আমলেও মন্ত্রিসভায় বাঙালিদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব ছিল। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য এতটা ছিল না যতটা এখন শুরু হয়েছে। সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও বাঙালিদের প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করা হয়েছে। হিতেশ্বর শইকিয়া যখন মুখ্যমন্ত্রী তখন অসমের প্রশাসনিক স্তরের উঁচু পদে বাঙালি আধিকারিকরা অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রধান সচিব অরুণাদয় ভট্টাচার্য, অর্থ সচিব নিরঞ্জন ঘোষ সহ অন্যান্য অনেক আধিকারিক এবং পুলিশ বিভাগে উঁচু পদে আসীন ছিলেন বাঙালি আধিকারিকরা। কিন্তু এখন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সবদিক থেকেই বাঙালিদের গুরুত্বহীন করে তোলার এ গভীর ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছে। তরুণ গগৈ মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালেও প্রশাসন রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব মোটামুটি ভালই ছিল। যদিও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকা খানিকটা পিছিয়ে ছিল একথাও সত্য। কিন্তু বর্তমানে চিত্রটা পুরোপুরি উল্টো।
বর্তমান সরকারের আমলে বাঙালিদের রাজনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দিতে প্রথমেই হিন্দু-মুসলিমের বিভাজন টেনে দেওয়া হয়েছে। এরপর মুসলিমদের মধ্যে নানা গোষ্ঠীতে বিভাজন ঘটিয়ে তাদের মধ্যে পৃথক চেতনা গড়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় এবং অস্থানীয় হিসাবে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে সংঘাতের পরিবেশ রচনা করা হচ্ছে। হিন্দু বাঙালিদের একাংশকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য নানা ধরনের কৌশল রচনা করা হচ্ছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে বলতে গেলে বর্তমান শাসক দল বিজেপির জন্মই হয়েছে বরাক উপত্যকায়। অথচ এই উপত্যকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভা এবং অন্যত্র তুলনামূলক ভাবে কম দেখতে পাওয়া যায়। বরাক থেকে বিশেষ করে শিলচর আসনের সাংসদরা বারবার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন। ময়ীনুল হক চৌধুরী, সন্তোষমোহন দেব, নীহাররঞ্জন লস্কর, কবীন্দ্র পুরকায়স্থ কেন্দ্রে দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারও সেই সূত্র ধরে শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্যর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট পুরনো। কিন্তু তার মন্ত্রিত্ব আটকাতে হঠাৎ করে পবিত্র মার্গারিটাকে উজান অসম থেকে মন্ত্রী করে পরিমলবাবুর মন্ত্রিসভায় ঢোকার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সরল সত্যটা শাসকদলের সবাই বুঝতে পারেন কিন্তু মুখ খুলতে ভয় পান। রাজনীতির অঙ্গনে এমন সূক্ষ্ম কূটনৈতিক চাল দেওয়া হচ্ছে তা সবাই বুঝতে পারছেন। ডাক্তার রাজদীপ রায়কে দ্বিতীয় বার মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি কেন্দ্রে মন্ত্রিত্বের দাবিদার হয়ে উঠতেন। তার সেই পথকে আটকে দেওয়ার জন্যই শিলচর আসনকে তফসিলি সংরক্ষিত আসন করে রাজদীপের দ্বিতীয়বার মনোনয়নের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলক্ষ দে পুরকায়স্থ সরব ছিলেন। কিন্তু তাকেও পোরোক্ষে ভীতি প্রদর্শন করে কণ্ঠকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালিদের কন্ঠ হয়ে উঠেছিলেন শিলাদিত্য দেব। তাকেও এখন গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। এমন অজস্র উদাহরণ রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের পিছিয়ে দেওয়ার।
প্রশাসনিক স্তরে এখন অসমের সচিবালয়ে বাঙালি অফিসারদের খুঁজে পাওয়াই মুশকিল, পুলিশ বিভাগেও অবস্থা তথৈবচ। বর্তমান সরকারের আমলে যে এক লক্ষ লোককে চাকরি দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে ২১ হাজার চাকরি বাঙালিদের পাওয়ার কথা কিন্তু দেখা গেছে মাত্র দু’হাজার মানুষকে মাত্র চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ বিশাল বঞ্চনার সত্যকে ধামাচাপা দিতে নানা অজুহাত নানা যুক্তি দাঁড় করানো হচ্ছে। সরকারি বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে স্থানীয়দের নিয়োগ করাই নিয়ম, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বরাক উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে মানুষকে নিয়োগ করে পাঠানো হচ্ছে। একদিকে, তারা এখানে এসে ভাষার সমস্যায় ভুগেন, অপরদিকে এখানে এসে উপার্জন করে তা দিয়ে দুই জায়গায় পরিবার প্রতিপালন করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। বরাক উপত্যকা বিভিন্ন থানা এবং সরকারি কার্যালয় গুলিতে এখন স্থানীয় মানুষ অনেকাংশই কমে গেছে। নিয়োগ দুর্নীতির এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ বিষয় নিয়ে বহুবার অভিযোগ আনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে, চাকরি দেওয়া হয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ বরাকের মানুষ অযোগ্য প্রকারান্তরে তাই বলা হচ্ছে।
বাঙালিদের সাহিত্য সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিভাজন সৃষ্টি করতে বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের জন্ম দেওয়া হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কারণ, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন এবং বরাক উপত্যকা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন অসমের বাঙালিদের সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা ও অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের কোন প্রয়োজন রয়েছে কিনা এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে এবার ভাষা শহিদ দিবস পালন অনুষ্ঠানে এসে বাংলা সাহিত্য সভা অসমের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অসম আন্দোলনের ফসল বলে বর্ণনা করে তার সংগঠনের নিহিত উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। তার এই বক্তব্যকে ঘিরে বরাক উপত্যকায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। অনেকে তারিন্দা মুখর হয়ে ওঠেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি পরে বলেছেন, অসম সরকারের অসম চুক্তির রূপায়ণ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে তিনি এই তথ্য পেয়েছেন। প্রশ্ন হল অসম সরকারের অসম চুক্তির রূপায়ণ বিভাগের পোর্টালে যদি এধরনের ভুল তথ্য দিয়ে রাখা হয় এর উদ্দেশ্য হলো আসাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে ধারাবাহিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তাকে প্রত্যাখ্যান করা। নতুন প্রজন্মের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে অসম আন্দোলনকে মহিমা মণ্ডিত করতে গিয়ে শিলচরের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করা। অর্থাৎ এখানে সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক পরিমণ্ডলেও বিভাজনের রেখা টেনে দিয়ে বাঙালিদের কিছুটা কোনঠাসা করে রাখা। রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা বাঙালিদের। এই বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে আর্থিক সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক চর্চার পথ থেকে পশ্চাদপদ করে রাখলে রাজ্য উন্নতির শিখরে পৌঁছবে কী ভাবে এ প্রশ্নটা সঙ্গত কারণেই দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কর্মক্ষম কোনও বৌদ্ধিক গোষ্ঠীকে পশ্চাদপদ করে রাখার নজির নেই। অসমে প্রতিটি ধর্মীয় এবং ফাঁসি গোষ্ঠীর যথাযথ উন্নয়ন হোক এটাই রাজ্যের সার্বিক উন্নতির জন্য কাম্য। কোন জনগোষ্ঠীকে সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করে দেখে রাজ্যকে উন্নত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার বয়ানবাজি আসলে সত্যকে চাপা দিয়ে রেখে অসত্যকে সত্য সাজানোর এক অপপ্রয়াস মাত্র। এই প্রবণতা যে ঠিক নয় এমন বোধোদয় ঘটুক, এটাই এখন সময়ের দাবি। বর্তমানের রাজনীতিকরা এটা উপলব্ধি করতে পারলে রাজ্যের মঙ্গল। অন্যথায় উন্নয়নের নিরিখে রাজ্য ক্রমে পিছিয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
