ডলু গ্রিনফিল্ড : কোম্পানির রিপোর্টে অসঙ্গতি, ক্ষোভ
বরাক তরঙ্গ, ১৬ জুন : ডলু চা-বাগানে প্রস্তাবিত এয়ারপোর্ট নির্মাণের সব ধরনের কাজের উপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কারণ পরিবেশ সংক্রান্ত অনুমতি না নিয়েই জোরজবরদস্তি ৪১ লক্ষেরও অধিক চা-গাছ ও হাজার হাজার ছায়া গাছ কেটে প্রজেক্টের কাজ শুরু করে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছেছিল। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে অবৈধ দাবি করে গৌহাটি হাইকোর্টেও অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের একটি মামলা চলছে। এমতাবস্থায় সরকার পরিবেশ সমীক্ষা করার জন্য একটি কোম্পানিকে বরাত দিয়েছে। সেই কোম্পানি যে রিপোর্ট তৈরি করেছে তাতে রয়েছে অসংখ্য অসঙ্গতি এবং আইন ও কোর্টের আদেশ উল্লঙ্ঘন, এব্যাপারে বিস্তৃত অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মামলার সঙ্গে যুক্ত সবক’টি সংগঠন। এক প্রেস বিবৃতিতে সংস্থাগুলোর পক্ষে-
মৃণালকান্তি সোম, অরিন্দম দেব, মানস দাসরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, পরিবেশ রিপোর্টের অঙ্গ হিসাবে বাধ্যতামূলক গণশুনানি করতে হয়। এই গণশুনানি করতে হয় প্রত্যক্ষভাবে ভুক্তভোগী জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য। ‘পরিবেশ অনুমতির’ আইনি সংজ্ঞা অনুযায়ী পরিবেশ অডিটের সাথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সামাজিক অডিটও। চা-শ্রমিকদের জীবনজীবিকার উপর এবং অঞ্চলের জনসাধারণের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ও পড়বে তার রিপোর্টও তাতে সন্নিবিষ্ট করতে হবে। পরিবেশ অডিট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭২ অনুযায়ী, বড়াইল অভয়ারণ্যের উপর প্রভাব, ট্রাফিক প্রভাব, কোর্টের মামলার বিষয় সহ পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় সবিস্তারে খতিয়ে দেখেনি। জমি অধিগ্রহণের ফলে ডলু চা-বাগানের ফসল এলাকা সাংঘাতিকভাবে কমে যাওয়ার জন্য শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন এবং তাদের জীবনজীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সেই বিষয়টি পরিবেশ অডিট এড়িয়ে গেছে এবং তাকে ধামাচাপা দিতে পরিবেশ সংক্রান্ত গণশুনানি নোটিফিকেশন আইন, ২০০৬ এবং এই সম্পর্কিত উচ্চ-আদালতের বিভিন্ন রায় ও আদেশকে উল্লঙ্ঘন করে আগামী মাত্র ৯ দিন আগে অর্থাৎ ১৪ জুন স্থানীয় পত্রিকা মারফত স্থান পরিবর্তন করে হাতিছড়ায় গণশুনানি করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে , যা স্পষ্টতই গণশুনানির বিধি উল্লঙ্ঘন করে।

এই গণশুনানির ঘোষণা বাতিল করার দাবিতে বিস্তৃত আইনি বিধান ও আদালতের রায় উল্লেখ করে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ও ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি এবং নিউ ট্রেড ইউনিয়ন ইনিশিয়েটিভ পৃথক পৃথকভাবে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কাছাড় জেলা আয়ুক্তের কাছে অভিযোগ প্রেরণ করেছে। এই গণশুনানির ঘোষণা ৩০ দিনের আগে দেওয়ায় নির্দিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন ও নির্দিষ্ট দিনের মাত্র ৯দিন আগে স্থান পরিবর্তনের ঘোষণার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এছাড়াও চা-শ্রমিকদের মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে গণশুনানির পর্যাপ্ত প্রচারের বিধান মানা হয়নি। প্রস্তাবিত এয়ারপোর্টে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ডলু টি এস্টেটের ময়নাগড়, লালবাগ ও ডলু ডিভিশনের শ্রমিকরা। এবং যেখানে প্রস্তাবিত এয়ারপোর্টের জন্য ১৬৩ ধারা জারি করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেই অঞ্চলে গণশুনানির স্থান নির্ধারণ না করে দূরে হাতিছড়া টি এসেস্টে স্থানান্তরণ ও গণশুনানির নোটিফিকেশন জারি করার ক্ষেত্রে নিয়ম উল্লঙ্ঘন এবং গণশুনানির ব্যাপক প্রচার না করা উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে সংস্থাগুলো মত পোষণ করে। তাই, প্রস্তাবিত এই গণশুনানি বাতিল করার দাবি জানিয়ে ইমেইলের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকপত্র পেশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ডলু চা-বাগানের শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্লেখ্য, কোয়ার্টার নির্মাণের মত প্রশাসনিক কিছু কাজে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করা হয়েছে, এব্যাপারে স্মারকপত্রে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।