শরীফনগর ও আশপাশে ভয়াবহ বন্যা, অগণিত মানুষ জলবন্দি
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২ জুন : টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে শরীফনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। কাঁকড়া ও লঙ্গাই নদীর জল বিপদসীমার অনেক উপরে গিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এক নিমিষে প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার বিঘা সবজিক্ষেত, মাছের ঘের, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শতাধিক বসতবাড়ি। জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে শরীফনগর, মেদল, বাঘন, ফকিরটিলা, নলুয়া, প্যাটেলনগর, পুটিমারা, কানিশাইল, শনিবারি ও ঘনশামরশক সহ বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। স্থানীয় একমাত্র পিডব্লিউডি রাস্তাটিও ক্রমেই জলের তলায় তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা-ই এখন একমাত্র বাহন। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

অসহায় মানুষজন আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু জমি কিংবা এলাকার একমাত্র সরকারি আশ্রয় শিবির—শরীফনগর এলপি স্কুলে। তবে বহু মানুষ এখনও বাড়ির ছাদ বা অন্য উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন। সরকারি তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা রয়েছেন ত্রাণ সহায়তার বাইরে।জানা গেছে, এলপি স্কুলের শিবিরে অবস্থানরত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা ইতিমধ্যেই সেক্টর অফিসার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সাব্বির আহমেদের মাধ্যমে সার্কল অফিসে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী মঙ্গলবার ওই শিবিরে কিছু ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অন্যান্য আশ্রিতদের সহায়তার বিষয়ে এখনও কোনো সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকটে পড়েছে বন্যাক্রান্ত জনসাধারণ।

এলাকার পুকুর, কুয়া, নলকূপ, ফিশারী যাওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে বন্যার দূষিত জল ব্যবহার করছেন। এতে জলবাহিত রোগের আশঙ্কা বেড়েছে। অন্যদিকে, গৃহপালিত পশুদের আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থাও হয়ে উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো গবাদি পশুর দেখভাল করতে গিয়ে পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। বন্যার জলস্তর ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমন উদ্বেগজনক অবস্থায় বৃহত্তর শরীফনগর এলাকার অসহায় জনগণ করিমগঞ্জ জেলার জেলা আয়ুক্তের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত উদ্ধার, আশ্রয়, খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ জলের সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
