গানে আবৃত্তি সহ নানা অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন শ্রীভূমিতে
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ৯ মে : বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো ২৫শে বৈশাখ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী নাচে গানে আবৃত্তি সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করল শ্রীভূমির বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করল তরুণ নাট্যদল ‘পাথারকান্দি নাট্যজন’। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দে জানান, এদিন সকালে দলের সদস্যরা স্থানীয় রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে কবিগুরুর মর্মরমূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সন্ধ্যাবেলায় অনুষ্ঠিত হয় এক ছিমছাম ঘরোয়া সাংস্কৃতিক পর্ব। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানিকতার সূচনা করেন সংস্থার শিল্পী রিমা দেব এবং সহ-সম্পাদক বিপ্রজিৎ দাস।আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে পরিবেশিত হয় সমবেত সঙ্গীত, একক রবীন্দ্রনৃত্য, আবৃত্তি এবং শ্রুতি নাটক। এই সব পরিবেশনায় অংশ নেন নাট্যজনের উদ্যমী ও প্রতিভাবান যুবশিল্পীরা—আয়ুষ দাস, বিপ্রজিৎ দাস, দেবস্মিতা দেবরায়, অমিত পাল, মৃন্ময় দেব, রিমা দেব প্রমুখ।

এদিনের অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে এক আবেগঘন সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে।প্রয়াত নাট্যজন সলিল পালচৌধুরীর হৃদয়ছোঁয়া গাননাটক মোদের ধ্যান-জ্ঞান, নাটক মোদের প্রাণ। নাটক জীবন প্রভাত-সায়াহ্নে, মুক্তি সূর্যস্নান। এই সুরের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় দিনের সৃজনশীল উদযাপন।রবীন্দ্রনাথের আদর্শ, নাট্যকলার প্রতি অঙ্গীকার এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে বুকে ধারণ করে ‘পাথারকান্দি নাট্যজন’ এগিয়ে চলেছে তাদের শিল্পযাত্রায়। তিন বছরের এই পথচলা কেবল শুরু আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণায় ভর করে তারা স্বপ্ন দেখছে আরও অনেক সৃজনশীল ভোরের। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘পাথারকান্দি নাট্যজন’ যে আরও সৃজনশীল পথচলার স্বপ্ন দেখছে, তা এদিনের অনুষ্ঠান থেকেই স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

বাজারিছড়া স্বামী বিবেকানন্দ লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুল : শ্রদ্ধা জানাতে উৎসবের আবহে মাতল বাজারিছড়া স্বামী বিবেকানন্দ লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুল।গোটা বিদ্যালয় চত্বর যেন রূপ নিল এক খুদে শান্তিনিকেতনে—যেখানে শিশুরা গাইল রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবৃত্তি করল কবিগুরুর কবিতা, আর ছন্দে-ছন্দে নেচে জানাল তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও উপলব্ধি।সাংস্কৃতিক এই উৎসবে শুধুই স্মরণ নয়, ছিল রবীন্দ্রচেতনার উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ ছিল ভাবনা, সৃজন ও সাহিত্যের প্রতি এক আন্তরিক নিবেদন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক আবহে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করল বাজারিছড়া স্বামী বিবেকানন্দ লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুল।অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় বাজারিছড়া রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের স্বামী বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহে। এদিন সকালে কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও অতিথিবৃন্দ। প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন স্কুলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর শান্তা ভট্টাচার্য্য।উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানপর্ব, যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত, একক ও সমবেত রবীন্দ্রনৃত্য, আবৃত্তি এবং নানা শিল্প পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মঞ্চে সাড়া ফেলে ছোট থেকে বড় সকল শিল্পীরা। শিশুদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে দিনটি হয়ে ওঠে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর।শিক্ষিকাদের পরিবেশিত সঙ্গীতও দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এবং উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যক অভিভাবক। বিশ্বকবির জীবনদর্শন ও ভাবনার উপর বক্তব্য রাখেন বাজারিছড়া রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সন্দীপ কর পুরকায়স্থ, সেবাশ্রমের সম্পাদক অজয় সূত্রধর এবং স্কুলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর শান্তা ভট্টাচার্য।অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজয় পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষিকা নন্দিতা ধর ও প্রিয়াঙ্কা পাল। অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন সেবাশ্রমের যুগ্ম সম্পাদক রাজেশ কর পুরকায়স্থ, দেবাশিস সেন, শিক্ষিকা অপর্ণা ভট্টাচার্য, প্রিয়াঙ্কা পাল, মহুয়া ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ নাগ, সুস্মিতা নাগ সরকার, রুমা সিংহ, পূর্ণিমা সিনহা, অজন্তা সিনহা, টিঙ্কু রাজা গোড়, ঝুমা কানু, সুনীতা মুকিম, রঞ্জিতা সিংহ, প্রতিমা চক্রবর্তী, গৌরী চৌধুরি, বীরজিত সিনহা, সুনীতা পাশী প্রমুখ।

শ্রীভূমি সরস্বতী মহাবিদ্যালয় : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অনুষ্ঠানের সূচনায় দীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে রবীন্দ্র শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন সরস্বতী বিদ্যা নিকেতন পঞ্জিকৃত সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুবীর বরণ রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিরজা সুন্দরী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা শ্রীমতী সুপর্ণা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন মহাবিদ্যালয়ের প্রশাসনিক আধিকারিক প্রজ্ঞা চক্রবর্তী। প্রধান অতিথি শ্রী সুবীর বরণ রায় কবিগুরুর জীবনী নিয়ে প্রাঞ্জল বক্তব্য রাখেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার অংশ হিসেবে সংগীত পরিবেশন করেন ছাত্রী অহনা সেন, নৃত্যে অংশ নেন স্নেহা দে ও শিক্ষিকা সংহিতা চৌধুরী, ব্যায়াম ও যোগ প্রদর্শন করেন বিনায়ক দে। ‘রবীন্দ্র ভাবনা’ বিষয়ক বক্তব্য উপস্থাপন করেন ছাত্র সুরঞ্জিত নমশুদ্র।এছাড়াও, সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন সুবীর বরণ রায়, সুপর্ণা চৌধুরী, প্রজ্ঞা চক্রবর্তী এবং কলেজের অন্যান্য শিক্ষিকাবৃন্দ। ‘রবীন্দ্র প্রসঙ্গ’ নিয়ে আলোচনা করেন কলেজ শিক্ষিকা চাঁদনি দাস, সংহিতা চৌধুরী এবং সবিতা মজুমদার।অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শ্রীমতী প্রজ্ঞা চক্রবর্তী।

শ্রীভূমি সরস্বতী বিদ্যানিকেতন : শ্রীভূমি সরস্বতী বিদ্যা নিকেতনে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনটি শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে নৃত্য, গীত, আবৃত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে।
সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ের ‘অরবিন্দ রায় স্মৃতিকক্ষ’-এ অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে দীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির অধ্যক্ষা ড. গীতা সাহা ও প্রধান আচার্য অঞ্জন গোস্বামী। প্রধান আচার্য উদ্বোধনী বক্তব্যে রবীন্দ্র দর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ড. গীতা সাহা কবিগুরুর জীবন ও কর্ম নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে শিশু বাটিকার ছাত্রছাত্রীরা সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে, দশম শ্রেণির ছাত্রীরা পরিবেশন করে সমবেত সংগীত। একক পরিবেশনায় ছিলেন প্রতিক্ষা দে (নৃত্য), প্রদীপ্তা দে(নৃত্য) দেবাদৃতা সাহা সরদার (নৃত্য) ও সুস্মিতা চন্দ (আবৃত্তি)।উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও আচার্যবৃন্দ।দলগত নৃত্য করবেন দশম শ্রেনীর বিদ্যার্থীঅনন্যা রায়, বেদশ্রী দেব, সৃষ্টি দাস, দেবস্মিতা ধর, দেবমিতা রায়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান অপরাজিতা আচার্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এসইউসিআই (সি) : দল এবং তার বিভিন্ন গণসংগঠনের সদস্যরা সকাল আটটায় করিমগঞ্জ শম্ভু সাগর পার্কের রবীন্দ্র মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাল্যদানে উপস্থিত ছিলেন অরুণাংশু ভট্টাচার্য, পরিমল চক্রবর্তী, তুষার দাস, বিষ্ণু দত্ত পুরকায়স্থ, প্রজ্জল দেব, সঞ্চিতা শুক্ল সহ অন্যান্যরা। মাল্যদান অনুষ্ঠানের পর সকলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেন যে – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমস্ত ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। আবারো স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশপ্রেমিক গীত, কবিতার মধ্য দিয়ে দেশবাসীকে জাগিয়েছেন। বঙ্গ ভংগের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। উপস্থিত সবাই অনুভব করেন যে আজ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতার উপর যে আক্রমণ নেমে এসেছে তার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য রবীন্দ্রনাথের জীবন, সংগ্ৰাম ও সৃষ্টিকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে , আমাদের ব্যক্তি জীবনে সমাজ জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আজকের দিনের যুগোপযোগী আদর্শে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে তার দেশপ্রেম, মানবতাবোধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে উপস্থিত সকলেই সংকল্পবদ্ধ হন।

পণ্ডিত দীনদয়াল আদর্শ মহাবিদ্যালয় : শ্রীভূমি জেলার এরালিগুলস্থিত পন্ডিত দীনদয়াল আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে শুক্রবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে। মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. জয়শ্রী চক্রবর্তী তাঁর স্বাগত ভাষণে কবিগুরুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে সংগীত, নৃত্য ও বক্তৃতার মাধ্যমে কবিগুরুর সৃষ্টিকে উদযাপন করা হয়।অনুষ্ঠানটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করেন বাংলা বিভাগের ছাত্রী বর্ষা পাল। ওই বিভাগের ছাত্রী সাজিদা নার্গিসের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ, কর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় উপস্থিতি অনুষ্ঠানের সাফল্যকে উল্লেখযোগ্য করে তোলে।