রাজ্যের বেকারদের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ২৬ মার্চ : অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ অর্গানাইজেশন এর কাছাড় জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শিলচরের শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত সংগঠনের কর্মীরা বেকারদের কর্মসংস্থান প্রদান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় বেকারদের অগ্রাধিকার প্রদান, বেকারদের বেকারভাতা প্রদান এবং পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ীভাবে চাকরিরত অধ্যাপকদের চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘ সময় স্লোগান দিতে থাকে।
বুধবার বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিজিত কুমার সিনহা এবং সহ-সভাপতি পরিতোষ ভট্টাচার্য। বক্তারা দাবি তোলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে লক্ষ লক্ষ শূণ্যপদে স্থায়ীকর্মী নিয়োগ করতে হবে, কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত উপযুক্ত হারে বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে এবং স্থানীয় প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে। তারা বলেন রাজ্যে বেকারত্বের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে রাজ্যে পঞ্জীকৃত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৯ লক্ষেরও অধিক এবং পঞ্জীকৃত না হওয়া শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সরকারের দেওয়া তথ্যের চেয়ে আরও কয়েকগুণ বেশি। এরাজ্যের বেকার যুবক যুবতীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে এবং কোনমতে মজুরি খেটে নিজের পরিবার পরিজনের মুখে দু মুঠো আহার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজ্যে সরকারি উদ্দোগে যেসব কলকারখানা একসময় গড়ে উঠেছিল সেগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি বহু বিভাগ সহ সাত হাজারের বেশি সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরো এগারো হাজার সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে তা সংকোচিত হচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন যে পূর্বে রাজ্য সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে স্থানীয় বেকারদের সুযোগ প্রদান করত। কিন্তু বর্তমান সরকার সে সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। ফলে প্রান্তিক এলাকার বেকার যুবক যুবতীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় বরাক উপত্যকার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ঘটনা স্থানীয় বেকারদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি এও লক্ষ্য করা গেছে যে রাজ্যের পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ীভাবে চাকুরীরত অধ্যাপকদের চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যা অত্যন্ত অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করছে যাতে যুবকরা জীবনের সমস্যা সমাধানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে। এই বিষয়ে যুবকদের সচেতন হয়ে যুব আন্দোলন গড়ে তুলতে বক্তারা আহ্বান জানান।

রাজ্যের বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার যুবকদের উপযুক্ত হারে বেকার ভাতা প্রদান করা, রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির স্বার্থে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিটি সরকারি কলকারখানা পুনরায় চালু করা, সরকারি স্কুল, বিভাগ বন্ধ না করা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় বেকারদের পূর্বের ন্যায় অগ্রাধিকার দেওয়া, রাজ্যের পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ীভাবে চাকুরীরত অধ্যাপকদের চাকরি নিয়মিতকরণ করা, বেকারদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির স্বার্থে নতুন নতুন কলকারখানা সরকারি উদ্দোগে গড়ে তোলা ইত্যাদি দাবিতে একটি স্মারকপত্র মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে জেলা আয়ুক্ত মারফত প্রদান করা হয়। বিক্ষোভে চলাকালে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেলা সভাপতি অঞ্জন কুমার চন্দ সহ দিলীপ কুমার রী, দিলীপ কালোয়ার, সুজিত আকুঁড়া, সুবীর রায় প্রমুখ।
