বোখারিতে সাতটি প্রস্তাব গৃহীত, “নেদায়ে জামিয়ার” মোড়ক উন্মোচন
বরাক তরঙ্গ, ২৩ জানুয়ারি : খতমে বোখারিতে উত্তরপূর্ব ভারত এমারতে শরয়িয়াহ ও নদওয়াতুত তামির এবং আলজামিয়াতুল ইসলামিয়ার যৌথ বার্ষিক সন্মেলনে সাতটি প্রস্তাব গৃহিত হয়। অসমের সরকারি মাদ্রাসার ঐতিহ্য পুনর্বহাল করতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা চালিয়ে যেতে জনসাধারণের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া, ডিলিমিটেশনের নামে অসমের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বিধানসভার এলাকাকে অন্য গ্রাম ও বিধানসভা এলাকার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আসাম সরকারের কাছে দাবি জানানো এবং করিমগঞ্জ জেলার নাম পাল্টে শ্রীভূমি করাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে জেলার নাম করিমগঞ্জ করতে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানানো, অসমের সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা ভাষা সংগ্রামের নায়ক মওলানা আবদুল জলিল চৌধুরী এবং প্রয়াত মহিতোষ পুরকায়স্থের অবদান স্মরণীয় করে রাখতে বাঘমারা এবং মালুয়ার সামনে বরাকনদীর উপর নির্মিয়মান সেতু দুটি তাঁদের নামে নামাঙ্কিত করা, হজ যাত্রার ছুটি পনেরো দিন আগে ঘোষণা এবং অহেতুক অগ্রিম টাকা নেওয়া বন্ধ করা, মীনা থেকে মক্কায় বাস যাত্রা সহজ করা, উমরার মত হজের ব্যায় সংকোচন করতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি, গত ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অসম সরকার ১৯৩৫ সালের ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট বাতিল করে স্প্যাশিয়েল ম্যারেজ অ্যাক্টের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনে মুসলিমদের বাধ্য করা হয় যা ব্যয়সাধ্য এবং কষ্টদায়ক। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে কাজি প্রথা ফের চালু করতে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি, রাজ্য সরকারের অধীনে অনেক কর্মচারী নির্ধারিত বেতনে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত। অনেকে অবসরের প্রান্তে পৌঁছে গেছেন। মানবিক কারনে এদের চাকরি নিয়মিত করার দাবি সহ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড° মনমোহন সিং, শিল্পোপতি রতন টাটা, বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক ড° জন্মজিৎ রায় সহ উপত্যকার আরও অনেক প্রয়াতের প্রতি শোক প্রকাশ এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামীয়া বদরপুর এ খতমে বোখারি অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় উত্তর-পূর্ব ভারত এমারতে শরয়ীযাহ ও নদুয়াতুত তামির সংগঠনের ৬০ তম বার্ষিক সম্মেলন এবং আল-জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া ৭৩ তম বার্ষিক সম্মেলন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ তথা নেপালের সাংসদ ও নেপাল জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খালিদ সিদ্দিকি নদওয়ি। অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন উত্তরপূর্ব ভারতের আমিরে শরিয়ত মওলানা ইউসুফ আলি।
অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মওলানা আতাউর রহমান। পরিচালনায় ছিলেন আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়ার নাজিমে তালিমাত মওলানা আবদুল্লাহ। প্রথম অধিবেশন বিভিন্ন ছবাহী মক্তবের শিশুদের কিরাত পাঠ, গজল ও প্রদর্শনী ছিল। বেলা দেড়টায় দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু নদওয়া সংস্থা ও আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়ার পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। নদওয়াতুত তামীরের পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মওলানা খালিদ সিদ্দিকি নদওয়ি। আল জামিয়া মাদ্রাসার পতাকা উত্তোলন করেন আমিরে শরিয়ত।
তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। অধিবেশন পরিচালনা করেন নদওয়াতুত তামীরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান মাঝারভূইয়া। অনুষ্ঠানে অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সম্পাদকীয় বক্তব্য রাখেন। প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান মাঝারভূইয়া।
এবছর প্রথমবারের মতো সাংবাদিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা প্রদান করা হয় দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার বরিষ্ঠ সাংবাদিক মিলন উদ্দিন লস্কর, সাংবাদিক অনিন্দ্য ভট্টাচার্য, নববার্তা প্রসঙ্গ পত্রিকার সাংবাদিক দীপন পাল, দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকার সাংবাদিক সেলিম আহমেদকে।
অনুষ্ঠানে উঃ পূর্ব ভারতের প্রথম আমীরে শরীয়ত মওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় অসম রাজ্য জমিয়ত উলামার সভাপতি ওলানা মুস্তাক আহমেদ আনফরকে। আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভূইয়ার মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয় আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আব্দুল মুনিমের অনুপস্থিতিতে তাঁ প্রতিনিধির হাতে। এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নদওয়াতুত তামীরের কেন্দ্রীয় সম্পাদক চৌধুরী ওসামা মবরুর। অনুষ্ঠানে আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়ার মাদ্রাসার ছাত্র সংসদের মুখপত্র “নেদায়ে জামিয়ার” মোড়ক উন্মোচন করা হয়।