উত্তাল হয়ে উঠে সুতারকান্দি সীমান্ত, প্রতিবাদী সভা সনাতনী ঐক্য মঞ্চের
বরাক তরঙ্গ, ১ ডিসেম্বর : শ্রীভূমি জেলার সুতারকান্দির বাংলাদেশের সীমান্তে সমগ্ৰ বরাকের হিন্দু সংগঠনের নেতা-কর্মী সহ বিশেষভাবে সাধু-সন্তরা বাংলাদেশের ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীকে নিঃশর্তে রেহাই সহ হিন্দুদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার দাবিতে উত্তাল করে তোলেন। রবিবার কর্মসূচীকে ঘিরে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ আন্দোলনকারীরা সীমান্তের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে বিএসএফ এবং অসম পুলিশ আন্দোলনকারীদের সীমান্ত থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে থামিয়ে দেয়। তবুও প্রতিবাদীরা দৃঢ় সংকল্পে অটুট থাকে, পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের টানাটানি শুরু হয়। প্রতিবাদীদের পুলিশের লাঠিচার্জ করতে দেখা যায়।
এদিন প্রথমে সুতারকান্দি সীমান্তের পাশে থাকা একটি মাঠে “সনাতনী ঐক্য মঞ্চ” এক প্রতিবাদী সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্বহিন্দু পরিষদের উত্তরপূর্ব প্রান্তের সভাপতি শান্তনু নায়েক স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এই প্রতিবাদী সভাটি হলো বরাকের হিন্দুদের এক ঐতিহাসিক সভা, হিন্দুদের প্রতিবাদী সভায় প্রমাণিত হয়েছে। বরাকের হিন্দুরা হলো এক বলিষ্ঠ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিবাদী হিন্দু জাতি।

সভায় উপস্থিত শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের কর্মাধ্যক্ষ বিজ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ধর্ম আচার্য প্রমুখ বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা নিয়ে দেশটি নীরব। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অনেক মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থান ধ্বংস করা হয়েছে। নারীদের জোর করে বিয়ে করা হচ্ছে। অবৈধ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ ঘটছে কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সমগ্র দেশ এই বিষয়ে নীরব।তিনি আরো বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারকরতে হবে এবং অবিলম্বে তাদের ৮ দফা দাবি মেনে। তাদের স্বাধীন অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। না হয় আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক আমদানি রফতানি বন্ধ করে দিয়ে আপনাদেরকে বুঝিয়ে দেব যে ভারত শান্তির পক্ষে আছে। শিলচর ভোলাগিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী ভুবনেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, বাংলাদেশের বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন ও সম্পত্তি যাতে সুরক্ষিত থাকে সে ব্যাপারে সেখানকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। নিতে হবে কড়া পদক্ষেপ। প্রতিবেশী ভারত সরকারকেও এ ব্যাপারে সদর্থক ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

এদিন অন্যান্যদের মধ্যে সনাতনী ঐক্য মঞ্চের সমন্বয়ক অসিত চক্রবর্তী ও আরএসএস-র শিবব্রত সাহা প্রমুখ নিজ-নিজ বক্তব্যে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার সহ লুটপাট, ধর্ষন হত্যা এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের তীব্র ভাষায় নিন্দা জানান। সনাতনী ঐক্য মঞ্চ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পক্ষ থেকে দাবি জানান এই বর্বরোচিত কার্যকলাপ অবিলম্বে বন্ধ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার। আর যদি বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত না হওয়া অবধি এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সনাতনী ঐক্য মঞ্চের মিডিয়া সমন্বয়ক অভিজিৎ নাথ, ডাঃ মানস দাস, শিপ্রা গুন, কাছাড় জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক গোপাল রায় ও অভ্রজিৎ চক্রবর্তী (ঝলক), মিলন দাস, সৌমিত্র দত্ত রায়, বিপ্লব দে, রাকেশ চৌধুরী সহ অন্যান্যরা।
