বাংলাদেশে হিংসা ও আতঙ্কের আবহ উদ্বেগ ছড়াচ্ছে, পদক্ষেপ চাই : বরাকবঙ্গ
বরাক তরঙ্গ, ৯ আগস্ট : প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক ও অন্যান্য শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের উপর গত সোমবার থেকে হিংসা ও মানসিক উৎপীড়নের মাধ্যমে আতঙ্কের যে আবহ তৈরি করা হয়েছে তাতে গভীর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে । এ ধরনের পরিবেশ সুস্থ মানসিকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। তাই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার সমস্ত দ্বিধা এবং চাপ অগ্রাহ্য করে অসহায় জনমন্ডলীর আর্তনাদের অবসান ঘটাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিক। শুক্রবার বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের তরফে এই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত এক বিবৃতিতে এ দাবি তুলে বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসন ক্ষমতায় পট-পরিবর্তন হতেই পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এমনতর ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশে পড়ুয়া এবং সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে তার সুযোগ নিয়ে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছেন ওই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় , সাংস্কৃতিক ও লেখালেখি জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য সুস্থ উদার ভাবনার ব্যক্তিরা। এদের উপর আক্রমণের যে বীভৎস রূপ সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে এসেছে তাতে সঙ্গতভাবেই আন্তর্জাতিক সীমান্তের এপারের সংবেদনশীল মানুষের মনকে ভীষণ নাড়া দিয়েছে।
বিবৃতিতে বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুসারে ওই দেশের ৫৮ টি জেলা-উপজেলায় হিংসাশ্রয়ী ঘটনায় কয়েক হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিদ্বেষ পরায়ণ হামলার শিকার হয়ে হয়েছেন, তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো আক্রান্ত হয়েছে। এই সম্প্রদায়ের অনেকেই আর্থিক দিক থেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জগতের ব্যক্তিরাও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিখ্যাত ‘জলের গান’ ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ রাহুল আনন্দ সপরিবারে আক্রান্ত হয়ে কোনওক্রমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। তাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গীত সাধনায় তিনি যে উদার ঐতিহ্যের জন্ম দিয়েছিলেন তার কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছে হামলাকারীরা। দীর্ঘ বছর ধরে তাঁর তৈরি করা তিনহাজার বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অপূর্ব শিল্প কর্মগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। উদারমনস্ক লেখক, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে সুস্থ বৌদ্ধিক জগতকে সন্ত্রস্ত করে তোলা হয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে নিরব প্রশ্রয়ের ফলশ্রুতিতেই এসব হৃদয়বিদারক কান্ড ঘটেছে। সে দেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের স্তম্ভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলতে যেসব কাণ্ডকারখানা লক্ষ্য করা গেছে সেটা শুধু প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাবেরই ফলশ্রুতি নয় , এটা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়ও বহন করছে। নেপথ্য থেকে সংগঠিত প্ররোচনা না থাকলে এত ব্যাপক মাত্রায় এসব হিংসাশ্রয়ী ঘটনা ঘটতে পারে না। তাই শান্তির স্বার্থে ওই নেপথ্য শক্তির স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।
বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত আতঙ্কের আবহের মধ্যেও বাংলাদেশের অকুতোভয় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক জগতের ব্যক্তিরা যেভাবে হিংসার নিন্দায় এবং বিপন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য আক্রান্ত জনের সুরক্ষার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন তার ভুয়সি প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক সমন্বয় মঞ্চ ‘উদীচী’ সর্বপ্রথম সাংগঠনিক পর্যায়ে হিংসার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভয় ঝেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখক, শিক্ষাব্রতী এবং সমাজকর্মীরা মানবশৃঙ্খল তৈরি করে হিংসা বন্ধ করা এবং পীড়িত মানুষের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি তুলেছেন। একইভাবে সে দেশের ৩০ জন বিশিষ্ট লেখক, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষা জগতের ব্যক্তিবর্গ সরাসরি বিবৃতি দিয়ে লুটপাট, হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, উপদ্রুত এলাকায় কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে তোলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি এবং তাদের উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গও সংখ্যালঘু জনগণের বসতি এলাকায় গিয়ে তাদের বাড়িঘর এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর অবস্থা খোঁজখবর নিয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন। অনেক স্থানে প্রহরার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মোঃ ইউনুস ইতিমধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন গত কয়েকদিন ধরে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছেন। বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক দত্ত বিবৃতিতে বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছেন, নয়া সরকারের দায়িত্ব নিয়ে মোহাম্মদ ইউনুস তাঁর দেশে অরাজক অবস্থা অবসানের যে আশ্বাস দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে কাল বিলম্ব না করে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই আশা করছেন আন্তর্জাতিক সীমান্তের দুইপাড়ের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। গোটা বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গঠনও আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন। বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সহ- সম্পাদক মিলন উদ্দিন লস্কর এক প্রেস বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।