কার্তিকসেনা সিনহার পুরানো ভিডিও  ভাইরাল, প্রতিবাদের ঝড়

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১১ অক্টোবর : পাথারকান্দি বিধানসভায় রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে এক পুরনো ভিডিও! তাতে দেখা গিয়েছে, প্রাক্তন বিধায়ক কার্তিকসেনা সিনহা সমাজের এক বিশেষ তপশিলি জাতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ‘ডুম চাড়াল’ বলে সম্বোধন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ভিডিওটি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় মানুষ। প্রাক্তন বিধায়কের এমন মন্তব্যে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বালিপিপলা জিপি থেকে শুরু করে গোটা পাথারকান্দি অঞ্চলে।

শনিবার সন্ধ্যায় বালিপিপলা জিপির রাঙামাটি এলাকায় স্থানীয় তপশিলি সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এক প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক, পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। সভা জুড়ে ছিল ক্ষোভ, আক্রোশ ও অপমানের জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি।

সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লোয়াইরপোয়া জেলা পরিষদের সদস্য স্বপন দাস বলেন, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রাক্তন বিধায়ক কার্তিকসেনা সিনহা তাঁর জন্মস্থানের প্রতিবেশী তপশিলি বাঙালি সম্প্রদায়কে ‘ডুম চাড়াল’ বলে অপমান করেছেন। তাঁর মুখে এমন শব্দ শুনে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। একজন শিক্ষিত, প্রাক্তন জননেতার মুখে এমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য সমাজে বিভাজন তৈরি করে।

স্বপনবাবুর কথায়, কার্তিকবাবুর সাম্প্রতিক কংগ্রেসে যোগদান ও তারপর থেকেই বিভেদের রাজনীতি শুরু করা সমাজের কাছে এক নিম্ন মানসিকতার প্রমাণ বহন করছে। তিনি বলেন, রাজনীতি করার আগে মানুষ হওয়া জরুরি। এমন নেতাকে আমরা সমাজে গ্রহণ করব না।

বালিপিপলা জিপির প্রাক্তন সভাপতি মিলনকুমার দাস স্পষ্ট ভাষায় প্রাক্তন বিধায়কের সমালোচনা করে বলেন, “একজন প্রাক্তন বিধায়ক সমাজের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অপমান করলে তিনি কেবল তাঁদের নয়, গোটা সমাজকেই আঘাত করেন। তাঁর উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।”

এদিকে, বালিপিপলা জিপির আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্যা লাভলি মালাকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আমরা তফসিলি পরিবারভুক্ত হতে পারি, কিন্তু ‘ডুম চাড়াল’ নই। যদি উনি আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তবে আমাদের এলাকায় তাঁর একটি ভোটও পড়বে না।

বালিপিপলা জিপির সভানেত্রীর প্রতিনিধি শ্রীমৎ দাসও প্রাক্তন বিধায়কের ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান।তিনি বলেন যে রাজনীতিক মানুষের একতা ভাঙতে চান, তাঁকে জনগণই উত্তর দেবে।”

ইচাবিল চা-বাগানের বাসিন্দা তথা তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সনাতন রবিদাস বলেন একজন প্রাক্তন বিধায়কের মুখে এমন নিচু মানসিকতার কথা শোনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা তাঁর কাছে আহ্বান জানাই, ভবিষ্যতে যেন তিনি সংযত ভাষায় কথা বলেন এবং সমাজে বিভাজনের বীজ না বপন করেন।

অভিযোগের মুখে কার্তিকসেনা সিনহা জানান, ওই ভিডিওটি প্রায় পনেরো বছর পুরনো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা নতুন করে প্রচার করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য আমি কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করিনি। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করতে পুরনো ভিডিওটি নতুন করে ভাইরাল করা হচ্ছে। এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত।

Spread the News
error: Content is protected !!