হাসপাতালের রহস্যজনক মৃত্যু মহিলার, আটক ছেলে
মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১১ অক্টোবর : শনিবার এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতাল। মাতৃপ্রেমের চিরন্তন বন্ধনকে কলঙ্কিত করল এক পাষণ্ড পুত্র! জ্বরের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ৬০ বছরের মা রাজকুমারী সিনহা শেষমেশ প্রাণ হারালেন নিজের সন্তানের নিষ্ঠুর প্রহারে। এমন অভিযোগে পুলিশ আটক করেছে সঞ্জীব সিনহা নামে এক যুবককে। ঘটনায় শোকস্তব্ধ স্থানীয়রা, চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা শ্রীভূমি জুড়ে।
জানা গেছে, রাজকুমারী সিনহা শুক্রবার রাতে জ্বরের কারণে ভর্তি হন করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাত কেটে যায় শান্তিতেই। আজ সকালে তিনি নিজেই জানান, শরীর অনেকটাই ভালো লাগছে, তাই বাড়ি ফিরতে চান। চিকিৎসকরাও ছাড়পত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এরপরেই ঘটে চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
হঠাৎই হাসপাতালের কর্মীরা দেখতে পান, রাজকুমারী সিনহা বিছানা থেকে মাটিতে পড়ে গিয়েছেন। কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা দ্রুত ছুটে এসে পরীক্ষা করে দেখেন—মহিলা আর বেঁচে নেই! প্রাথমিকভাবে হৃদরোগে মৃত্যুর আশঙ্কা করা হলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠে আসে ভয়াবহ তথ্য।
হাসপাতালের স্টাফ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোরবেলায় রাজকুমারীর ছেলে সঞ্জীব সিনহা মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে আসে এবং কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মাকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতাল কক্ষে মা-ছেলের মধ্যে বচসা হয় এবং পরে সেই বচসা রূপ নেয় নির্দয় প্রহারে। এরপরই অসুস্থ মা অচেতন হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় পুরো বিষয়টি সদর থানার পুলিশকে জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং সঞ্জীব সিনহাকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত রাজকুমারী সিনহার বাড়ি শ্রীভূমি জেলার পাথারকান্দিতে। তাঁর পুত্র সঞ্জীব সিনহা পেশায় একজন পার্লার কর্মী, পঞ্জাবে কাজ করেন। তবে কী কারণে মায়ের উপর এমন নৃশংস প্রহার চালালেন, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। পারিবারিক কলহ নাকি অন্য কোনও গোপন কারণ—সব দিকেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।